অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তানিরা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তানিরা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পাক-ভারত সীমান্তে। তবে যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান গর্জন তুললেও যুদ্ধ করাকে দেশের জন্য সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় হিসেবে দেখছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। দেশটির জনগণের অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক হতাশা থেকে এটি স্পষ্ট যে তারা দেশটির এই ভঙ্গুর অবস্থায় আর যুদ্ধ চান না।

দেশটির জনগণ এখন যুদ্ধের চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, প্রতিনিধিত্বহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং অনিশ্চয়তায় ঢাকা ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি ভাবছে। দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদের এক শিক্ষার্থী বলেন, নেতারা শুধু শক্তি প্রদর্শন করতে চান। এমনিতেই আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এর ভেতরে যুদ্ধ নিয়ে এত কথা বলাটা খুব বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়। আমাদের শান্তি দরকার, নতুন কোনো ঝামেলা নয়।’ এই পাকিস্তানি শিক্ষার্থী আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় আমার পরিবারের জন্য শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজনীতিবিদদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা অনেক বেশি কথা বলেন। কিন্তু আমরা তেমন কোনো পরিবর্তন দেখি না। মনে হয়, তাঁরা বুঝতেই পারেন না, মানুষ কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেও সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে যুদ্ধকে ব্যঙ্গ করে পাকিস্তানীদের তৈরি মিম একদিকে যেমন হাস্যরসের তৈরী করছে অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা একে মানসিক চাপ সামলানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন। তবে পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কারণে সেনাবাহিনীর উপর ক্ষোভ কাজ করলেও যুদ্ধাবস্থায় দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি বিপুল জনসমর্থন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের ভারত সীমান্তের সাথে সাথে আফগান সীমান্তও অস্থির হয়েে উঠেছে। চলতি সপ্তাহেই আফগান সীমান্তে ৫৪ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।

 দেশটির দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিদ্রোহ সম্প্রতি আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। দেশের ভেতরে এতো সমস্যার মধ্যেও দেশটির অর্থনৈতিক সংকট জনগণের উদ্বেগকে আরও তীব্র করে তুলেছে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেছেন, ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার জেরে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কা দেশের নাজুক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে না। পাকিস্তানের অনেক নাগরিকের কাছেই এখন জীবিকা নির্বাহের সংগ্রাম ও সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা একই বোঝার অংশ হয়ে উঠেছে। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার কারণে দেশটির পর্যটন ব্যবসায়ও খরা দেখা দিয়েছে। নীলম উপত্যকায় অবস্থিত একসময়ের জমজমাট পর্যটন শহর কেরান এখন প্রায় জনশূন্য। অতিথিশালাগুলো নীরব।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর সীমান্ত-পারের এ অঞ্চলে আর পর্যটকেরা আসছেন না। আমজাদ নামক পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলেও ভারতের হামলার আশঙ্কায় কেউ আসছে না। সর্বোপরি এক অস্থির সময় পার করছে পাকিস্তান।