আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারক ও প্রসিকিউটরদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারক ও প্রসিকিউটরদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

মার্কিন ও ইসরাইলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা প্রচেষ্টায় যুক্ত থাকার কারণে আইসিসির দুই বিচারক ও দুই প্রসিকিউটরের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আইসিসিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের জন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’ এবং ‘আইনি যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে আইসিসি ইতিমধ্যেই নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

ফ্রান্সও যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। কারণ নিষেধাজ্ঞার শিকারদের একজন বিচারক নিকোলাস গিলু ফরাসি নাগরিক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত ও হতাশ। অন্য তিন বিচারক হলেন কানাডার কিম্বারলি প্রোস্ট, ফিজির ডেপুটি প্রসিকিউটর নাজহাত শামীম খান এবং সেনেগালের মামে মানদিয়ায় নিয়াং। রুবিও এক বিবৃতিতে আদালতকে ‘রাজনৈতিকীকরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অবৈধ বিচারিক হস্তক্ষেপ’ করার অভিযোগ এনেছেন। উল্লেখ্য, আইসিসি একটি বৈশ্বিক আদালত। তার এখতিয়ার রয়েছে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা পরিচালনার। আদালত সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাগুলোকে তার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে ‘একটি সুস্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে। তারা আরও বলেছে, ‘এগুলো নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি বিশ্বের লাখ লাখ নিরীহ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অপমানজনক।’ ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা স্বাধীন বিচারব্যবস্থার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওদিকে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ। 

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গিলুর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে নেতানিয়াহু ও গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদনের জন্য। প্রোস্টকে শাস্তি দেয়া হয়েছে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর জন্য, আর খান ও নিয়াংকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবৈধ পদক্ষেপ নেয়ার কারণে। নিষেধাজ্ঞার ফলে চার বিচারকের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ ও স্বার্থ জব্দ করা হবে। এটি এ বছরের দ্বিতীয় দফা পদক্ষেপ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান কেসি এবং চার বিচারকের ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান আগে যুক্তরাষ্ট্রকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারণ এটি সরাসরি ‘আইনের শাসনের প্রতি সম্মানের’ পরিপন্থি। এর আগে জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেসকা আলবানেজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়। তিনি গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের কড়া সমালোচক। রুবিও আলবানেজের আইসিসি সমর্থন এবং মার্কিন বা ইসরাইলি নাগরিকদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় তার সম্পৃক্ততাকে নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রতিক্রিয়ায় আলবানেজ সামাজিক মাধ্যমে জানান, তিনি ইতালি থেকে এসেছেন, যে দেশ আদালতের প্রতিষ্ঠাতা এবং যেখানে আইনজীবী ও বিচারকরা ন্যায়বিচারের জন্য জীবন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, আমি সেই ঐতিহ্যকে সম্মান করার অঙ্গীকার করি।