সিলেটে সাদা পাথর লুটের শীর্ষে বিএনপি-আ.লীগের নেতারা

সিলেটে সাদা পাথর লুটের শীর্ষে বিএনপি-আ.লীগের নেতারা

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর লুটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জেলা প্রশাসনের যৌথ তদন্তে ৪২ জনের নাম চিহ্নিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জড়িতদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকর্মীরাও রয়েছেন।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি ১০টি সুপারিশসহ প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। গত এক বছরে সিলেটে প্রায় ৪০ লাখ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন হয়েছে বলে দুদক ও জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে অভিযুক্তদের তালিকাও সংযুক্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী বলেছেন, ‘পাথর লুটের সঙ্গে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করা হবে, নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবে না।’ তিনি আরও জানান, সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন বিজিবি ব্যাটেলিয়ন স্থাপনের কাজ চলছে। দুদকের অনুসন্ধানে ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর চুরির সঙ্গে ৪২ জন স্থানীয় ব্যক্তি চিহ্নিত হয়েছেন।

তালিকায় বিএনপির ২০, আওয়ামী লীগের ৭, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি দুজন করে এবং স্থানীয় ১১ জন ব্যক্তি রয়েছেন। বিএনপির ২০ জন নেতাকর্মী হলেন: সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজি কামাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু, সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন, সাজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী, মানিক মিয়া, সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান, কোষাধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) শাহ আলম ওরফে স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স। আওয়ামী লীগের সাত নেতাকর্মী হলেন: সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান।

 জামায়াতের ২ নেতা হলেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন এনসিপির দুই নেতা হলেন সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।

 দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধ পাথর উত্তোলনে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কাজে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের অবহেলাও ধরা পড়েছে। বিষয়টি দ্রুত কমিশনে জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা কয়েস লোদী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে মিথ্যাভাবে জড়ানো হয়েছে প্রকৃত লুটেরাদের আড়াল করার জন্য। আমি পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার পক্ষে কাজ করি, কখনো লুটের পক্ষে দাঁড়াইনি। এই অপপ্রচার প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার ষড়যন্ত্র।’ একইভাবে জামায়াত নেতা ফখরুল ইসলামও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘পাথর লুটের সঙ্গে আমার নাম জড়ানো একটি ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার। এর মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসন জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার বিগত বছরগুলোতে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পাথর উত্তোলনের ইজারা দেয়নি। তবুও রাতের অন্ধকারে অবৈধ উত্তোলন বেড়ে গেছে, যা এক ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় পেয়েছে। সিলেটে মোট ৫১টি কোয়ারি রয়েছে, যার মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে ৮টি সবচেয়ে সক্রিয়। বিশেষ করে সাদা পাথরের ৮০ শতাংশ লুটপাট সাম্প্রতিক সময়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার কারণ হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় খান মো. রেজা উন নবী জানান, পাথর লুটকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত চলছে। কাজ করা হচ্ছে যাতে প্রকৃত অপরাধীরা শনাক্ত হয় এবং নির্দোষদের হয়রানি করা না হয়। পাশাপাশি, যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্স আজও অভিযানে অব্যাহত রয়েছে। যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শুধু সদর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৯৭ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কোম্পানীগঞ্জ থেকে উদ্ধারকৃত পাথরের হিসাব এখনো নিশ্চিত নয়। সিলেটের পাথর লুটের ঘটনায় সরকারের কঠোর মনোভাব পরিষ্কার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিবেশ রক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।