ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর যেভাবে ঠেকানো হয় যুদ্ধ, চাঞ্চল্যকর যেসব তথ্য দিলো কাতার

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর যেভাবে ঠেকানো হয় যুদ্ধ, চাঞ্চল্যকর যেসব তথ্য দিলো কাতার

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তাল প্রেক্ষাপটে গত সোমবার (২৩ জুন) সন্ধ্যায় কাতারে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে এই প্রথম এমন আক্রমণ।

 এসময় কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকর্তারা দোহায় একটি বৈঠকে আঞ্চলিক উত্তেজনা নিরসনের পথ খুঁজছিলেন। হঠাৎ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সতর্ক করা হয়—ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দোহার দিকে এগিয়ে আসছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, ‘আক্রমণের আগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী ভবন কেঁপে উঠেছিল।

আমাদের মনে হচ্ছিল যেন পুরো অঞ্চল বিপদের মুখে।’ আল-আনসারি বলেন, এটা ছিল ‘সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।’ ঘটনার দিন সকাল থেকেই উপসাগরীয় দেশগুলোতে ছিল অস্থিরতা। বাহরাইন ও কুয়েতে সামরিক প্রস্তুতি নেয়া হয়, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয় সরকারি ভবনে।

দুবাই ও আবুধাবিতে অনেকেই শহর ছাড়ার টিকিট কেটেছিল আগেভাগেই। দোহাতেও মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয় এবং মার্কিন বিমান ঘাঁটি আল-উদেইদ থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়া হয়। আরও পড়ুনঃ মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ কাতারের সামরিক গোয়েন্দা তথ্য ও রাডার সিস্টেম সকালেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কাতারের দিকে সরানো হচ্ছে।

তবে নিশ্চিত হয়ে ওঠা যায়নি হামলা হবে কিনা। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জানা যায়, ইরান থেকে ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র আল-উদেইদ ঘাঁটির দিকে ধেয়ে আসছে। আল-আনসারি বলেন, ‘এই প্রতিরক্ষা অভিযানের নেতৃত্ব কাতারের হাতে ছিল, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ছিল।

’ কাতার সেনাবাহিনী ৩০০ সদস্য মোতায়েন করে এবং দুটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল ব্যাটারি সক্রিয় করে। ইরানের ছোঁড়া ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৭টি উপসাগরের ওপরেই ভূপাতিত করা হয়, ১১টি দোহা শহরের ওপর আকাশেই ধ্বংস করা হয় এবং মাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি নির্জন এলাকায় পড়ে সামান্য ক্ষতি করে। আরও পড়ুনঃ ৬০ ঘণ্টা ধরে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ইরান, রহস্য কী মুখপাত্র আল-আনসারি জানান, ইরান আগেই জানিয়েছিল, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালায়, তবে যেসব ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা রয়েছে, সেগুলো বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। এ সতর্কবার্তা পুনরায় জানানো হয়েছিল ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, হামলার ঠিক আগের দিন। তবুও আল-আনসারি বলেন, কাতারকে সরাসরি কোনো সতর্কতা ইরানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি এবং কাতার কখনোই কোনো ‘সবুজ সংকেত’ দেয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জনগণের জীবনকে কোনো রাজনৈতিক চুক্তির অংশ হিসেবে বাজি রাখি না।’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোন দেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে। তিনি জানান, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি এবং কাতার যেন ইরানকেও একই বার্তা দেয়। আরও পড়ুনঃ ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রমাণ পায়নি জাতিসংঘ কাতারের প্রধান মধ্যস্থতাকারী মোহাম্মদ বিন আবদুলআজিজ আল-খুলাইফি ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গেও আলোচনা হয়।

‘সেই রাতেই যুদ্ধ অথবা শান্তির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হতো,’ বলেন আল-আনসারি। ‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, এটি একটি বিরল সুযোগ—যেখানে আঞ্চলিক শান্তি আবার ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।’ এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।