কুমিল্লায় সেই নারীর বিবস্ত্র ভিডিও করেন ছাত্রলীগের সভাপতি

এবার কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল করার মূল হোতা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমন। এ ঘটনায় মূল আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৮ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এই ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে রবিবার ভোর ৫টায় ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে। তারা হলেন হান্নান মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান আলী, তালেব হোসেনের ছেলে মো. অনিক ও মো. আরিফ। তাদের সবার বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায় বাহেরচর গ্রামে।
আরও পড়ুনঃ আগাম জামিন পেলেন 'কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে আদালত ও জামিন' কিনতে চাওয়া সেই সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না ঘটনার সূত্রপাত- ভুক্তভোগী ওই নারী (২৫) হিন্দু ধর্মাবলম্বীর। প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন তিনি। বেশ কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীর মা ফজর আলীর কাছে টাকা ধার চান। দিতে সম্মতি প্রকাশ করেন ফজর আলী।
নিজের মোবাইলে টাকা না থাকায় মেয়ের মোবাইল থেকে ফোন দেন ভুক্তভোগীর মা। সেই সুবাধে ফজর আলী ওই নারীর ফোন নম্বর পেয়ে বেশ কয়েকবার কথা বলে সুসম্পর্ক তৈরি করেন। কথার রেশ ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে সুযোগ বুঝে ওই নারীর বাড়িতে যান ফজর আলী। বাড়ির পাশে পূজা হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি (ওই নারী) বাড়িতে একা ছিলেন।
আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে জোরে ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। ঘরে ঢোকার সময় ফজর আলীকে দেখে ফেলেন এক প্রতিবেশী। তিনি বিষয়টি জানাজানি করলে এলাকার লোকজন ঘরে ঢুকে মবের সৃষ্টি করেন। ঘটনাস্থলেই মেরে ফজর আলীকে মারধর করে লোকজন। অন্যদিকে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণসহ মারধর করে।
শনিবার রাতে এই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। আরও পড়ুনঃ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতার চাঞ্চল্যকর চ্যাট ফাঁস অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয়- আটককৃত সুমন রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তার নেতৃত্বে হিন্দু নারীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হয়। অন্য তিনজন ছাত্রলীগের সদস্য ও সুমনের সহযোগী।
অন্যদিকে ধর্ষণ মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীর একটি ছবিতে একই আসনের সাবেক এমপি ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের একটি মিছিলের অগ্রভাগে দেখা যায়। গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে চলাফেরা করলেও বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, তিনি তাদের লোক নন। আরও পড়ুনঃ বিষপান করা চার ‘জুলাই যোদ্ধার’ পাশে তারেক রহমান ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘ফজর আলীর সঙ্গে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক হয়নি।
আমার নম্বর পেয়ে একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন তিনি (ফজর আলী)। এমন ঘটনায় আমি আমার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন মারাত্মক মর্মাহত। ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝামেলা এড়াতে আমরা বিষয়টি নিয়ে সামনে এগোতে চাই না।’ মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করার পর পুলিশ অভিযানে নামে। ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মূল অভিযুক্তসহ ৫ জন আটক হয়েছে।