মা মরা চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ,এক হৃদয় বিদারক ঘটনা

মা মারা গেছেন প্রায় চার বছর আগে। বাবা ঢাকায় ব্যবসা করেন। সৎ মা খোঁজ রাখেন না। এ সুযোগে দেড় বছর আগে প্রতিবেশী যুবক চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর (১২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সম্প্রতি ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের মহিষাখোলা গ্রামে। অভিযুক্ত যুবক ওই গ্রামের আকের শেখের ছেলে তুষার শেখ (২০)। তিনি কলেজছাত্র।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে সালিস বসায় সদকী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় অভিযুক্ত, ভুক্তভোগী, দুই পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে বনিবনা না হলে ওইদিন সন্ধ্যায় থানায় মামলা করতে যান ছাত্রীর বাবা। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে অভিযোগ স্বজনদের।
সরেজমিন এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে দুজনের। একপর্যায়ে তুষার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সবশেষ ১০ জুন রাতে তুষার ওই ছাত্রীর শয়নকক্ষে ঢুকে। ঘটনাটি জানতে পেরে ১১ জুন ভুক্তভোগীর বাবা বাড়িতে প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় ফলাফল পজেটিভ আসলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।
এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলে ১৬ জুন ছাত্রীকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় তুষারের স্বজনরা। সেখানে পেটের বাচ্চা নষ্ট করা হয়েছে বলে দাবি ছাত্রীর বাবার। এরপর বিয়ের আশ্বাসে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক সালিস বসায়। তবে সালিস না মেনে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত তুষার। পরে ছাত্রীর বাবা সন্ধ্যায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, মেয়ের মা নেই, আমি ঢাকায় থাকি। সেই সুযোগে তুষার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। ১০ জুন রাতের ঘটনার পর বিষয়টি টের পাই। এরপর বাড়িতে বেবি চেক করলে পজেটিভ আসে। তারপর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ১৬ জুন তুষারের স্বজনরা মেয়েকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্জাক মেম্বার গ্রামে সালিস বসায়। কিন্তু সালিসে তুষার বিয়ে না করে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যায় থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে আদালতে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, গরীব মানুষ বলে কোথাও বিচার পাচ্ছি না। মা মরা মেয়েকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। মান সম্মান সব শেষ। মরা ছাড়া আর কোনো গতি নেই।
সরেজমিন অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তুষার ও তার বাবা আকের শেখ নেই। তার মা প্রতিবেদকের সঙ্গে কোনো কথা না বলে বাড়ির গেট বন্ধ করে দেন।
তবে সদকী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ফোনে বলেন, অন্তঃসত্ত্বার কথা শুনে সবাই মিলে তুষারের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য সালিস বসানো হয়েছিল। কিন্তু তুষার বিয়ে না করায় সালিস ভেঙে দেওয়া হয়।
এদিকে মামলা না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।