ছাত্রী ও বিএনপি নেতার ‘যৌন কেলঙ্কারির’ ভিডিও ভাইরাল

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সিটি কলেজের শিক্ষক ও পৌর বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন চন্দনের দুটি ‘যৌন কেলঙ্কারির’ অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাত থেকে ভিডিও দুটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওটি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা চলছে। ৫৬ সেকেন্ড ও ১১ সেকেন্ডের ভিডিও দুটিতে দেখা যায়, কলেজ শিক্ষক চন্দন একজন নারীর সঙ্গে যৌন কাজে লিপ্ত। তবে ভিডিও’র নারীকে তা দেখা যাচ্ছে না। ভিডিওটিতে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম বা ধর্ষণ বলে মনে হয়নি। ওই নারী নিজেই অশালীন এই ভিডিওটি ধারণ করেন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অশালীন ভিডিওটি নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এতে সামাজিক অস্থিরতাও বৃদ্ধি পাবে। নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে অভিযুক্ত শিক্ষক এবং অশ্লীল এই ভিডিও যারা ফেসবুকে ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, ভিডিওতে থাকা ওই নারীর একটি অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। নবাবগঞ্জ সিটি কলেজের শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন চন্দনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন নারী। ওই নারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি কলেজের শিক্ষার্থী। ভিডিওটি নিজেই ধারণ করেছেন বলে জানান। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন চন্দন নবাবগঞ্জ সিটি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক। তার বাড়ি জেলা শহরের হুজরাপুর এলাকায়।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর অভিযোগ, কয়েক মাস আগে মোয়াজ্জেম হোসেন চন্দনের বাড়িতেই এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষক চন্দনের বড় ভাই নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোদাস্বের হোসেন সুমনের কাছে পড়তেন বলে জানান ওই ছাত্রী।
তিনি অভিযোগ করেন, আমরা চন্দনের বড় ভাই সুমনের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। প্রথম ঘটনার দিন আমাদের প্রাইভেট ছিল না। সুমন স্যারের কাছে একটা বই নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্যার আরেকটা ব্যাচ পড়াচ্ছিলেন। তাই স্যারের কথামতো পাশের একটি রুমে বসে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় চন্দন এসে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গেট লাগিয়ে দেওয়ায় চেষ্টা করলেও বের হতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রথমদিন এমন ঘটনা ঘটার পর আবার আমাকে ফোন দিয়ে ডাকে। এ সময় আমি স্বেচ্ছায় তার বাসায় গিয়ে পরিকল্পিতভাবে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করি। শুধু আমার সঙ্গেই মোয়াজ্জেম হোসেন চন্দন এমনটা করেছে তা নয়; আমার এক বান্ধবীসহ অনেক ছাত্রীকেই পড়ানোর সময় সুযোগ পেলেই শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন। এমনকি বাজে প্রস্তাব দিতেন।
কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, মেয়েদের সঙ্গে কথা বললেই নানা রকম কুপ্রস্তাব দেন চন্দন। বিষয়টি তার ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন।
ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি তিনি বান্ধবীদের কাছে জানতে পেরেছেন। তবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই কলেজছাত্রী।
এ ঘটনায় শুক্রবার (১৪ মার্চ) নবাবগঞ্জ সিটি কলেজের গভর্নিং বডির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ মো. তরিকুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, সোস্যাল মিডিয়ায় আমরাও ভিডিওটি দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। এ নিয়ে কী করা যায়, তা ঠিক করতে গভর্নিং বডির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন চন্দনের মন্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর রহমান বলেন, আপত্তিকর ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে