টুঙ্গিপাড়ায় অজ্ঞাত স্থান থেকে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিন চেয়ারম্যান

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গত কয়েক মাস ধরে অজ্ঞাত স্থানে থেকে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তিন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব ইউনিয়নের জনগণ। কারণ চেয়ারম্যানরা কোথায় আছেন সঠিক কেউ জানে না। তারা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র। অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালানো চেয়ারম্যানরা হলেন, ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহমেদ শেখ, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিলিয়া আমিনুল।
জানা যায়, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। কারণ তারা পাঁচজনই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা ছিলেন। ওই সময় টুঙ্গিপাড়ার ন্যায় দেশের অধিকাংশ চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সরকার।
এরপর থেকে উপজেলার ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী ও বর্ণিত ইউপি চেয়ারম্যানরা অফিস করলেও পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুর আহমেদ আত্মগোপনে থেকে যায়। তখন তার স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস দায়িত্ব পান। এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন কুশলী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সর্দার। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার স্থলে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ।
তারপর থেকে বাকি তিন ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু গত ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন ওই তিন ইউপি চেয়ারম্যান। বর্নি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন মুন্সী, হাফেজ মোহাম্মদ মোস্তাইন বলেন, শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল ঠিকমতো পরিষদে থাকেন না। নিজেদের কাজ ফেলে রেখে কয়েকমাস ধরে জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘুরছি, কিন্তু চেয়ারম্যানের দেখা পাচ্ছি না। আর অন্যান্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরও বন্ধ।
চেয়ারম্যানের একটা স্বাক্ষরের জন্য জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। তাই বর্নি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি। বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মাস খানেক হলো পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন জনগণের আবেদন বা কাগজপত্র একটা ফাইলে রেখে দেই। আর চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম দুই একদিন পর পর ফাইলটি নিয়ে যায়। আর চেয়ারম্যান কাগজপত্র সই করে পরে আবার পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই চলছে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের কাজ।
ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, সাহেদ তালুকদারসহ গোপালপুর ইউনিয়নের অনেকে বলেন, চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিক, চারিত্রিক ও মৃত্যু সনদ নিতে দিনের পরদিন পরিষদে ঘুরেও জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন জনগণের ভোগান্তি আর ব্যাপক সময় অপচয় হচ্ছে। শুনেছি চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। তাই জনজীবনের দুর্ভোগ কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে জানতে গোপালপুর ও ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দুই চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং আলী আহমেদ শেখকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইলে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সারা পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল বলেন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা মামলায় তাকে ১০৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পরিষদে আসছেন না। জনপ্রতিনিধিদের অফিস চলাকালীন কার্যালয়ে থাকার সরকারি নির্দেশ অমান্য করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, যেখানে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে দাঁড়ানো যায় না। তাই আমি ঘর পরিবর্তন করেছি, কিন্তু এলাকায়ই আছি। তিনি দাবি করেন তার এলাকার জনগণের ভোগান্তিতে নেই। কারণ তার স্বামী ও সচিবের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে বসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক বলেন, কোনো জনপ্রতিনিধি অনুমোদনহীনভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ও জনদুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।