জুলকারনাইন সায়েরের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস ১৫ আগষ্ট সেলিব্রিটিদের শোকের আড়ালে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র!

জুলকারনাইন সায়েরের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস ১৫ আগষ্ট সেলিব্রিটিদের শোকের আড়ালে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র!

১৫ আগস্ট জাতির শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের একাধিক তারকা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে যেসব পোস্ট করেছেন, তা নিছক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয় বরং একটি সুপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত প্রচারণার অংশ ছিল। এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।

বাংলাদেশি ফ্যাশন ট্রেন্ড ১৭ আগস্ট, রোববার, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সায়ের জানান, বিষয়টি ছিল “ওয়েল কো-অর্ডিনেটেড সাইকোলজিক্যাল ক্যাম্পেইন”, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলমান জনঅসন্তোষ ও বিশেষ করে জুলাইয়ের আন্দোলন ও গণহত্যার ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে সাধারণ মানুষকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সরিয়ে আনা হয়েছে। সায়েরের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে শোকপ্রকাশের নামে শেখ মুজিবকে একমাত্রায় গৌরবান্বিত করে একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা চালানো হয়যেখানে তার ১৯৭১ সালের অবদানকে ফোকাস করা হলেও, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের শাসনামলে ঘটে যাওয়া রক্ষীবাহিনীর দমন-পীড়ন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, এবং একদলীয় শাসনের বাস্তবতা পুরোপুরি উপেক্ষিত ছিল। “শোক জানানো হয়েছে ঠিকই,” লিখেছেন সায়ের, “কিন্তু কোথাও বলা হয়নি, আমরা মুজিবকে সম্মান করি, কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার বা গণহত্যাকে সমর্থন করি না।

বরং এই পোস্টগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ‘শুদ্ধ’ ভাবমূর্তি তৈরির জন্য ব্যবহার করা একটি প্রপাগান্ডার অংশ।” সায়ের অভিযোগ করেন, প্রচারণার প্রথম ঢেউ শুরু হয় ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে যেখানে শোবিজ অঙ্গনের পরিচিত মুখ তারিন, তমালিকা কর্মকার, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস এবং শামীমা তুষ্টি প্রাথমিকভাবে পোস্ট দেন। এরপর বাংলা চলচ্চিত্রের একজন শীর্ষ নায়কের স্ট্যাটাসকে “সেন্ট্রাল ভ্যালিডেশন” হিসেবে সামনে আনা হয়। দাবি করা হচ্ছে, এই অভিনেতাকে রাজনৈতিক যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে পোস্ট দিতে “রাজি করানো” হয়। এখানে বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলা সিনেমার কিং খান শাকিব খানের কথা বলা হয়েছে। আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো, এই পুরো প্রচারণার নেপথ্যে নাকি কাজ করেছেন একজন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আওয়ামী ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক, যিনি বিনোদন জগতেও বিশেষ প্রভাবশালী। তার তত্ত্বাবধানেই ‘অরাজনৈতিক’ ভাবমূর্তির কিছু সেলিব্রেটিদের দিয়ে আওয়ামী লীগের অনুকূলে পাবলিক ন্যারেটিভ তৈরির প্রয়াস চালানো হয়। এই প্রচারণায় নাম জড়িয়ে গেছে সংবাদমাধ্যমেরও। সায়ের তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন “যাহের আলভী” নামের এক অনখ্যাত ইউটিউব অভিনেতার কথা যিনি আগস্টের আগে “যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তাদের আনফ্রেন্ড করুন” টাইপের আহ্বান জানান এবং পরে ১৫ আগস্ট শোক প্রকাশ করেন। এরপর এক জাতীয় পত্রিকা তাকে নিয়ে বড় রিপোর্ট করে, যা সায়েরের ভাষায় “তার পুরস্কার”।

এই প্রতিবেদনের নেপথ্যে ওই মিডিয়া হাউসের একজন সাংবাদিক, যিনি একই সঙ্গে ওই শীর্ষ নায়কের ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন এবং অলিখিতভাবে পিআর ম্যানেজার বলেও দাবি করেছেন সায়ের। তার স্ত্রীও একজন গায়িকা, যিনি শোক জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন এবং তাকেও অন্য একটি পত্রিকায় ফিচার করা হয়। সায়েরের আরও দাবি, এই মনস্তাত্ত্বিক অপারেশনে পেছন থেকে অর্থ ও প্রভাব জুগিয়েছেন বিজ্ঞাপন জগতের এক প্রভাবশালী ‘মাফিয়া’, যিনি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউ) পড়াশোনা করেছেন এবং বাংলাদেশে ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।বাংলাদেশি ফ্যাশন ট্রেন্ড এই প্রচারণাকে শুধু প্রচারণা বললে ভুল হবে এটি ছিল ডিজিটাল মানসিক যুদ্ধের (সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার) একটি অংশ, যা চীনা দার্শনিক সান-জুর থিওরি অনুসারে পরিচালিত হয়েছে বলেও দাবি করেন সায়ের। এর উদ্দেশ্য ছিল তথ্য নিয়ন্ত্রণ, বিভ্রান্তি তৈরি, ও আবেগের উপর ভর করে সমালোচনাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা। “প্রত্যেকটি পোস্টে হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার—সবই পূর্বপরিকল্পিত,” বলেন সায়ের। “কেউ কেউ দিনে ১০০-এরও বেশি পোস্ট শেয়ার করেছে। যারা শেয়ার করছে, তাদের অনেকেই পরিচয়হীন বা পলাতক আইডি থেকে চালাচ্ছে, যারা প্রফেশনালি এই কাজের জন্য নিয়োজিত।” সায়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এটি হতে পারে জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্তদের পুনর্বাসনের প্রাথমিক ধাপ। আগামী দিনে হয়তো এসব সেলিব্রেটিকে দিয়ে সরাসরি আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালানো হবে, যেমন সি-গ্রেড অভিনেতা ইমতু রাতিশ সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে গৌরবান্বিত করে পোস্ট দিয়েছেন। সায়েরের মতে, আওয়ামী লীগের এই কৌশলের বিপরীতে বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপির অবস্থান এখনো ছন্নছাড়া। তারা নিজেদের অধিকাংশ প্রচার সময় ব্যয় করছেন পারস্পরিক সমালোচনায়, অথচ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দুঃশাসন বা ভোট ডাকাতি নিয়ে কার্যকর কোনো প্রচারণা নেই। নিজের স্ট্যাটাসের শেষে সায়ের স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন মাঠে নেই, হয়তো সহজে ফিরবেও না। কিন্তু বিচার এবং ক্ষমা চাওয়ার আগেই যদি তারা ফেরে তবে বাংলাদেশ আর সার্বভৌম থাকবে না।

 সেনাবাহিনী পঙ্গু হবে, নতুন রক্ষীবাহিনী তৈরি হবে, গণহত্যা ফিরে আসবে। তাই প্রতিরোধই একমাত্র পথ।”বাংলাদেশি ফ্যাশন ট্রেন্ড এসব সেলিব্রিটিদের মধ্যে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো চিত্র নায়ক শাকিব খানের পোষ্ট। এছাড়া ফ্যাসিস্ট দোসর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাকিব আল হাসানও রয়েছেন এই তালিকায়। তারিন, তমালিকা কর্মকার, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস, শামীমা তুষ্টি একে একে সকলই সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট করেছেন ১৫ আগষ্ট ঘিরে। তাদের দেখাদেখি সাধারণ আমপাবলিক অনেকেই আবার বিভ্রান্ত হয়ে পোষ্ট করেছেন ফেইসবুকে। এসব কালাচারাল ফ্যাসিস্টরা অর্থের কাছে যে বিক্রি হয়ে গেছে তা স্পষ্ট জুলকারনাইন সায়েরের পোস্টে। এসব ফ্যাসিস্ট দোসরদের এখনই বয়কট না করলে জাতিকে সামনে আরও ভুগতে হতে পারে। মনে রাখতে হবে, নিষিদ্ধ গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ আর হাসিনার পুনর্বাসন যারা চায় তারা দেশের শত্রু জাতির শত্রু।