ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: খালেদা জিয়া যে তিন আসনে লড়তে পারেন

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: খালেদা জিয়া যে তিন আসনে লড়তে পারেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এক দশকেরও বেশি সময় পর সরাসরি নির্বাচনে ফেরার সম্ভাবনার খবরেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেগম জিয়ার প্রার্থিতার বিষয়টি এখন বিএনপির ভেতরে যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনি সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও জন্ম দিয়েছে নতুন আগ্রহ। নির্বাচনে ফিরছেন খালেদা জিয়া? ২০০৮ সালের পর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনটি আসনে মনোনয়ন দিয়েও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় প্রার্থী হতে পারেননি বেগম জিয়া।

তবে ২০২৪ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশের সর্বোচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলায় খালাস দিলে আইনি বাধা সম্পূর্ণভাবে দূর হয়। ফলে ২০২৫ সালের ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে তার সরাসরি অংশগ্রহণে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে প্রার্থী করার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে।

এই তিনটি আসন হচ্ছে: আরও পড়ুনঃ নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করা নিয়ে যা বললেন জামায়াত আমির বগুড়া-৬ বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর) ফেনী-১ কেন গুরুত্বপূর্ণ এই আসনগুলো? বগুড়া-৭ আসনটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি, যার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিএনপির কাছে বিশাল। এখান থেকেই একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া নিজেও।

অন্যদিকে বগুড়া-৬ বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যা বিগত নির্বাচনে দলটির জন্য বিজয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ফেনী-১ আসনটিও খালেদা জিয়ার অতীত নির্বাচনী সাফল্যের অংশ। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। ফলে এবার তার প্রত্যাবর্তনে এই আসনগুলো থেকেই রাজনৈতিক পুনরুদ্ধারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। বগুড়াকে ঘিরে প্রত্যাবর্তনের বার্তা বগুড়া জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে, বেগম জিয়ার বগুড়া থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা দলের জন্য কৌশলগত ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

 দলীয় এক নেতা বলেন, “বগুড়া থেকে ম্যাডামের অংশগ্রহণ মানে হচ্ছে জনগণকে সরাসরি বার্তা দেওয়া—বিএনপি আবারও মাঠে ফিরেছে, নেতৃত্বে ফিরেছেন খালেদা জিয়া।” আরও পড়ুনঃ বছর শেষে জাতীয় নির্বাচন চায় জামায়াত : রেজাউল করিম নির্বাচন নয়, রাজনৈতিক নতুন অধ্যায় দলীয় নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য অনুযায়ী, শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়—খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন হতে যাচ্ছে একটি রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের সূচনা।

 তার অংশগ্রহণে জাতীয় রাজনীতিতে ভারসাম্য ফিরবে, ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে এবং দলীয় ঐক্য আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করছে বিএনপি। একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “বেগম জিয়া জনগণের আস্থার প্রতীক। তার ফেরাটা মানে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার। তিনি শুধু দলের নেতা নন, তিনি একটা রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিচ্ছবি।”

 অতীতের নির্বাচনী সাফল্য খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক ঐতিহাসিক নজির: ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে ৫টি করে আসনে নির্বাচন করে প্রতিবারই সবগুলোতে জয়ী হন। ২০০৮ সালেও তিনটি আসনে প্রার্থী হয়ে তিনটিতেই বিজয়ী হন। শুধু ২০১৮ সালের নির্বাচনেই আইনি কারণে বাদ পড়েন, তবে জনগণের সমর্থন তখনও তার পাশে ছিল।

 ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনীতিতে যেভাবে উত্তাপ বাড়ছে, তার কেন্দ্রে এখন বেগম খালেদা জিয়া। বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ এবং ফেনী-১—এই তিনটি আসনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে জল্পনা-কল্পনা, প্রস্তুতি, কৌশল ও প্রত্যাশার এক মিশ্র বাস্তবতা। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর তার সরাসরি অংশগ্রহণ শুধু নির্বাচন নয়, এক নতুন রাজনৈতিক সময়ের দরজাও খুলে দিতে পারে। আরও পড়ুনঃ ছাত্রত্ব নিয়ে ছাত্রদল সভাপতির সমালোচনার জবাবে যা বললেন শিবির সভাপতি FAQs (সাধারণ পাঠকের প্রশ্নোত্তর) প্রশ্ন: খালেদা জিয়া কি ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন? উত্তর: হ্যাঁ, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সব মামলা খারিজ হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশ নিতে আর কোনো আইনি বাধা নেই। প্রশ্ন: কোন তিনটি আসনে খালেদা জিয়া লড়তে পারেন? উত্তর: বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১—এই তিনটি আসন থেকে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশ্ন: বগুড়া-৭ আসনটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর: এটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় বিএনপির কাছে প্রতীকী ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 প্রশ্ন: খালেদা জিয়া এর আগে কয়টি আসনে জয় পেয়েছেন? উত্তর: তিনি একাধিকবার ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয় পেয়েছেন, সর্বশেষ ২০০৮ সালে তিনটি আসনে জয়ী হন।