যে কারণে আরব দেশগুলো চাইলেও ইরানকে সহযোগিতা করতে পারে না

যে কারণে আরব দেশগুলো চাইলেও ইরানকে সহযোগিতা করতে পারে না

ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র যখন যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে, তখন প্রশ্ন ওঠে— কয়টি মুসলিম দেশ ইরানকে সাহায্য করতে বিমান বা সেনা পাঠিয়েছে? এই প্রশ্নই মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা সামনে নিয়ে আসে। যদিও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের কথা বলা হয়, বাস্তবে সেই ঐক্য বহু ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।

ইরান মূলত শিয়া প্রধান দেশ, অন্যদিকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্র সুন্নি মতবাদে বিশ্বাসী। শিয়া-সুন্নি মতবিরোধ বহুদিনের, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি গভীর রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধে রূপ নিয়েছে।

 যেমন ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা, যাদের পেছনে রয়েছে ইরানের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা। ফলে সৌদি আরবের পক্ষে ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখা কার্যত অসম্ভব। আরও পড়ুনঃ মালয়েশিয়াফেরত যুব মহিলা লীগের নেত্রী তন্দ্রা গ্রেপ্তার এই মতবিরোধ ছাড়াও আরেকটি বড় কারণ হলো, অনেক আরব দেশ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।

 যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশ প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে আমেরিকা। এমন পরিস্থিতিতে আমিরাতের পক্ষে চাইলেও ইরানকে সামরিক বা কৌশলগত সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। জর্ডান ইতোমধ্যে ইসরায়েল ও আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছে। সিরিয়া নিজেই এক প্রকার ধ্বংসপ্রাপ্ত। এমন বাস্তবতায় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য বা ইরানকে সমর্থন দেওয়া মূলত এক আদর্শিক কল্পনা মাত্র। তবে ইরান থেমে নেই।

তারা বিকল্প পথ খুঁজছে। চীনের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে ইরান। এর আগে দুই দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিল না। ইরান নতুন মিত্র খুঁজছে— যেমন চীন ও রাশিয়া। রাশিয়াকে ইরান ড্রোন ও মিসাইল প্রযুক্তি দিচ্ছে, বিপরীতে রাশিয়ার কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিচ্ছে।

চীন ইতোমধ্যেই ইরানে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। আরও পড়ুনঃ ফোর্দো শেষ হয়ে গিয়েছে : ট্রাম্প চীনের এই কৌশলগত বন্ধু নির্বাচন এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের পথে অগ্রযাত্রা বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির চেহারা পাল্টে দিচ্ছে। এখন আর যুদ্ধ নয়, চীন অর্থনীতি দিয়ে বিশ্ব দখলে নিতে চাইছে। বিশ্বজুড়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে ব্যবসা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকার অনেক দেশেই চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে।

 চীন এখন অর্থনীতিতে প্রায় এক নম্বরে, আর সামরিক শক্তিতে তিন নম্বরে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের আগের প্রভাব হারাতে শুরু করেছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধেই হিমশিম খাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের ডলার আধিপত্যও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, পরবর্তী সুপারপাওয়ার হবে চীন। আর ইরান যেহেতু চীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাই বৈশ্বিক রাজনীতিতে ইরানও নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

 আরও পড়ুনঃ সেতু থেকে বাস পড়ে ২১জন নিহত বিশ্বব্যবস্থায় এখন আর ধর্ম নয়, কাজ করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো ইরানকে সহযোগিতা করতে না পারার পেছনে এই বাস্তবতাই মূল কারণ। সুতরাং, যাঁরা মুসলিম ঐক্যের স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের বোঝা উচিত— রাজনীতি এবং ভূ-রাজনীতি ধর্মের চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব ও কঠিন।