ভারত সীমান্তে সেনা বাড়াচ্ছে পাকিস্তান,ভয়ে আছে ভারত

ভারত সীমান্তে সেনা বাড়াচ্ছে পাকিস্তান,ভয়ে আছে ভারত

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারতীয়দের মধ্যে। ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে দেশটি। অন্যদিকে যুদ্ধের আশঙ্কায় পাল্টা প্রস্তুতি চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সীমান্তঘেঁষা ঘাঁটিতে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে পাকিস্তান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়লেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর তরফে অবশ্য এই নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।


প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ইসলামাবাদের সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে বিমান ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ফ্লাইটরাডার২৪’-এর স্ক্রিনশট থেকে। এক্স হ্যান্ডলে সেগুলোকে ছড়িয়ে দেন নেটিজেনদের একাংশ। ওই স্ক্রিনশট অনুযায়ী, পহেলগাঁও কাণ্ডের পর দক্ষিণের করাচি বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে একের পর এক বিমান উত্তরের লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডির কাছে মোতায়েন করেছে ইসলামাবাদ। যদিও এর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি ভারতীয় এ গণমাধ্যমটি।

উল্লেখ্য, করাচির ‘সাউথ এয়ার কমান্ড’ থেকেই গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যাবতীয় অপারেশন পরিচালনা করে পাক বিমানবাহিনী। উত্তরাঞ্চলে ভারতের সীমান্তের কাছে ইসলামাবাদের মোট চারটি বায়ুসেনা ছাউনি রয়েছে। সেগুলো হলো, লাহোর সংলগ্ন সারগোধা ও মুরিদ এবং রাওয়ালপিন্ডি সংলগ্ন চাকলালা ও নুর খান। এই ঘাঁটিগুলোকে পাক বায়ুসেনার শিরদাঁড়া বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া খবর অনুযায়ী, পিএএফ১৯৮ এবং লকহিড সি-১৩০ই হারকিউলিস নামের পরিবহণ বিমান দক্ষিণের ঘাঁটি থেকে উত্তরে নিয়ে গিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডি ফৌজি জেনারেলরা। এছাড়া পিএএফ১০১ ও এমব্রায়ের ফেনম ১০০ নামের ছোট জেট বিমানও সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। শেষেরটি মূলত ভিআইপি পরিবহণ এবং নজরদারির জন্য ব্যবহার করে ইসলামাবাদ।

উল্লেখ্য, পাক বিমানবাহিনীর ভারত লাগোয়া ছাউনিগুলোর মধ্যে লাহোর সংলগ্ন মুরিদে আবার মোতায়েন রয়েছে নজরদারি এবং হামলাকারী ড্রোন। কয়েক বছর আগে তুরস্কের থেকে বের‌্যাক্টার টিবি-২ নামের মানববিহীন উডুক্কু যান কেনে ইসলামাবাদ। সেগুলোর প্রায় সব ক’টি ওই ঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। ২০২০ সালে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আজারবাইজ়ানের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছিল এই ড্রোন।

বায়ুসেনা ঘাঁটির পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে পাক ফৌজ। সেখানকার বাঙ্কারগুলোতেও সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। বিশ্লেষকদের দাবি, ভারতের সঙ্গে সম্মুখসমরে যেতে যে ইসালামাবাদ প্রস্তুত, এই সমস্ত পদক্ষেপেই রয়েছে তাঁর ইঙ্গিত।

বিশ্লেষকদের দাবি, ২০১৯ সালের মতো ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রত্যাঘাত শানাবে বলে একরকম ধরেই নিয়েছে পাকিস্তানের সেনা। সেই জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখছে তারা।

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পর ২৩ তারিখ মধ্যরাতেই ইসলামাবাদের শীর্ষ কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে তলব করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা, বায়ু উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করেছে ভারত। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে।

২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাসভবনে জরুরি বৈঠক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিএস)। পরে রাত ৯টা নাগাদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী। যত দিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, তত দিন সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।

এছাড়া অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করেছে ভারত। উপযুক্ত নথিপত্র নিয়ে যাঁরা এই সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ১ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ (এসভিইএস)-এর অধীনে কোনও পাক নাগরিককে আর এ দেশে প্রবেশাধিকার দেবে না নয়াদিল্লি। অতীতে এই ভিসায় যাঁদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে তা-ও বাতিল করা হয়েছে।

‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ ভিসা প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত পাকিস্তানি এখন ভারতে আছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের সদস্যসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।