এসসিও প্রতিরক্ষা সম্মেলন: চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যে বার্তা দিলো ইরান

এসসিও প্রতিরক্ষা সম্মেলন: চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যে বার্তা দিলো ইরান

ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের পর প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে গেলেন ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে। কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক মিত্র চীনের কুইংদাও শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) প্রতিরক্ষা সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।

 এই সফরেই তিনি চীনের পক্ষ থেকে ইরানের প্রতি সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, এসসিও-ভুক্ত ৯টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের অংশগ্রহণে এই দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয় বুধবার।

একই দিন নাসিরজাদে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই সম্মেলনের ঠিক আগের দিন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ১২ দিনের বিমান হামলা-পাল্টা হামলার পর দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সেই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আঘাত ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনাকে লক্ষ্য করে সংঘটিত হয়, যা এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

 আরও পড়ুনঃ রেস্টুরেন্টের খাবারে মূত্রত্যাগ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুন সম্মেলনে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, ‘একতরফা নীতি, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ও আধিপত্যবাদ আজকের বৈশ্বিক অস্থিরতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, এসসিও সদস্য দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার রক্ষা ও কৌশলগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সমন্বয় জোরদার করতে হবে।

এদিকে, ইরানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাসিরজাদে বলেন, ‘ইরানের বৈধ অবস্থানের প্রতি চীনের সমর্থন ও বোঝাপড়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও যুদ্ধবিরতির স্থায়ীত্ব বজায় রাখতে চীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে।’ চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায়, সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো সামরিক সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনা কর্মকর্তারা এর আগেই ১৩ জুন ইসরায়েলের ইরানে চালানো নজিরবিহীন হামলা ও পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাতের তীব্র সমালোচনা করেন।

 তারা এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির ওপর একটি ‘গুরুতর আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। আরও পড়ুনঃ মার্কিন হামলার জবাব কেমন হবে, জানালো ইরানের সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট উল্লেখ্য, ইরানের অন্যতম প্রধান জ্বালানির ক্রেতা চীন গত কয়েক বছরে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। সামরিক মহড়া, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও নিষেধাজ্ঞা-অবহেলিত অর্থনৈতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই মিত্রতা দিন দিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

যদিও ২০২২ সালের পর থেকে চীনা কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানি তেল আমদানির তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, বিশ্লেষকরা জানান—নীরবে এই বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগ্যাং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চীন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এসসিও-এর সদস্য হিসেবে চীন গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।’

আরও পড়ুনঃ ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই বড় এক সুসংবাদ পেল পাকিস্তান ২০০১ সালে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানকে নিয়ে গঠিত এসসিও সন্ত্রাসবাদ দমন ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে গঠিত হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই জোট আরও বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে এতে ভারত, পাকিস্তান, ইরান ও বেলারুশ সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে।

তবে এই জোটের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও স্বার্থবিরোধ থাকার কারণে একটি অভিন্ন নীতিগত অবস্থানে পৌঁছানো সবসময় সম্ভব হয় না। যেমন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে রয়টার্স জানায়, এই সম্মেলনে ‘সন্ত্রাসবাদ’ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়নি। উল্লেখ্য, চীন সফরে যোগ দেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও, যা ২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের পর কোনো ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রথম চীন সফর