জাতীয়’র আগে ১১ সিটিতে নির্বাচন জরুরি নিয়ে যা বললেন: আসিফ মাহমুদ

নির্বাচনের পূর্বে দেশের নাগরিক সেবা সচল রাখতে অন্তত ১১টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘‘এই নির্বাচন হতে পারে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির একটি কার্যকর ‘টেস্ট কেস’।’’
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ছাড়া কোনো ধরনের সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে না।’ শনিবার (২১ জুন) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব বলেন। উল্লেখ, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত সরকারের আমলে নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করে বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা বাতিল করা হয়।
একইভাবে ভেঙে দেওয়া হয় জেলা ও উপজেলা পরিষদও। ইউনিয়ন পরিষদগুলো এখনও টিকে থাকলেও অধিকাংশ চেয়ারম্যান ও সদস্য পলাতক অথবা অকার্যকর। অনেক জায়গায় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বা অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুনঃ সালমান এফ রহমানের মূল চক্রের গোপন খবর ফাঁস করলেন আল জাজিরার সাংবাদিক ফলে দেশজুড়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ প্রদানসহ মৌলিক সেবা কার্যক্রমে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে গ্রামীণ ও নগর এলাকাগুলোতে নাগরিকদের জন্য কার্যকর স্থানীয় প্রশাসনের অভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। সরকার গঠনের শুরুর দিক থেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল।
উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্র প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট মহল দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অন্তত ইউনিয়ন বা সিটি পর্যায়ে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে সেবা ফিরিয়ে আনার। কিন্তু বিএনপিসহ কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দলের আপত্তির কারণে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয়নি। আরও পড়ুনঃ ‘গিনেস বুক রেকর্ড’ গড়েছিলেন আগেই, এখন গড়ছেন দেশ, কে এই আশিক চৌধুরী? সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন ঘিরে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘জনগণের ন্যূনতম সেবা নিশ্চিত করতে হলে অন্তত ১১টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নিয়োগ করা প্রয়োজন। আমরা যদি রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবলে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ফলে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে অন্তত একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা যাচাই করার সুযোগ মিলতো।’
আরও পড়ুনঃ আগামী দুইদিন যেসব অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এদিকে, বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চালাতে কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে তাদের সীমিত ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতার অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার তাগিদ দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের আলোচনা এখন শুধু রাজনৈতিক গুরুত্বের নয়, বরং নাগরিক প্রয়োজনের প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত সিদ্ধান্তই হতে পারে এই অচলাবস্থার একমাত্র সমাধান