মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: ‘জিনে ধরেছে’ বলে আছিয়াকে নেওয়া হয় ঝাড়ফুঁক করাতে

মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: ‘জিনে ধরেছে’ বলে আছিয়াকে নেওয়া হয় ঝাড়ফুঁক করাতে

মাগুরার আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে এবার উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধর্ষণের পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে জিনে ধরেছে বলে আছিয়াকে ঝাড়ফুঁক করাতে এক হুজুরের কাছে নেওয়া হয়েছিল। তবে শিশুটির গলার কালচে দাগ ও বুকে আঁচড়ের চিহ্ন দেখে বলেন, ‘এটি ঝাড়ফুঁকের কাজ না। আপনারা দ্রুত বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’ মাগুরার আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে এই বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, মাগুরার আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে এটা বুঝতে পেরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘জিনে আঁছড় করেছে বলে সুকৌশলে’ প্রথমেই হাসপাতালে না নিয়ে ঝাঁড়ফুঁক করানোর জন্য এক হুজুরের কাছে নিয়ে যান প্রধান আসামি হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগম। কিন্তু সদর উপজেলার নিজনান্দুয়ালি মদিনাতুল উলুম পৌর গোরস্থান মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের হুজুর শিশুটির গলার কালচে দাগ ও বুকে আঁচড়ের চিহ্ন দেখে বলেন, ‘এটি ঝাঁড়-ফুঁকের কাজ না।

আপনারা দ্রুত বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।’ তারপরই শিশুটিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও শিশুটির বড় বোনের শাশুড়ি জাহেদা বেগম (৩৮) চিকিৎসক ও নার্সদের বিভ্রান্ত করেন। ঘটনার প্রকৃত তথ্য না দিয়ে তিনি বলেন, পেটের ব্যাথা নিয়ে শিশুটি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েছে। এবং হাসপাতালে ভর্তি না করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে চান। এদিকে মাগুরার আলোচিত এ মামলার রায় শনিবার (১৭ মে)। জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান রায় ঘোষণা করবেন। রায়ের জন্য এদিন আদালত চত্বর ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।

মামলাটির বিচারকাজও খুব দ্রুত সম্পন্ন হতে চলেছে। ঘটনার মাত্র দুই মাস ১১ দিনের মাথায় এই মামলার রায় হতে চলেছে। এর আগে ৬ মার্চ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শিশুটি তার বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়। সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। গত ১৩ এপ্রিল মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন। । ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বিচার কার্যক্রম। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২৭ এপ্রিল। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন ২৯ জন। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি করে ১২ কার্যদিবসে শেষ হয় বিচার। মামলা চার আসামি হচ্ছে- শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, মেয়ে জামাই সজীব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা জাহেদা বেগম। তারা কারাগারে আছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিকেল অ্যাভিডেন্স ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তবে তিনি মামলার সাক্ষ্য চলাকালে একাধিক দিন সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, প্রধান আসামি হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগমের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া হিটু শেখ ও জাহেদা বেগমের দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৫০৪ অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়েছে।