অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ ঝুঁকিতে পড়তে পারে

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস। চলতি সময়ে নানা কারণে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী—যিনি নব্বইয়ের দশকে দায়িত্ব পালন করেছেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, আগামী জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির পরিকল্পনা-প্রস্তুতি, সামাজিক মাধ্যমে দলটিকে ঘিরে নেতিবাচক প্রচারণা, তারেক রহমানের দেশে ফেরাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? আরেকটি পুরোনো রাজনৈতিক দল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বোচ্চ চাঁদাবাজি করছে। ঘোষণা দিয়ে চাঁদাবাজি করছে। তারা বলছে, তাদের অর্থের উৎস বলা যাবে না। এতে কী বোঝায়? কারণ টাকার উৎস বলে দিলে তো তার ক্ষতি হবে। এসব কথার অর্থ আমরা বুঝি, ফিডার তো খাই না। চাঁদাবাজি করছে সবাই আর নাম বলে বিএনপির। অসম্ভব। বিএনপি চাঁদাবাজি করে না। প্রথমদিকে কিছু ছিল, সেগুলো আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমার নেতা তারেক রহমান অনেক বহিষ্কার করেছেন।
এখন এ মুহূর্তে বিএনপিকে চাঁদাবাজির অপবাদ দেওয়াটা হলো অন্যায়। এ মুহূর্তে বিএনপি চাঁদাবাজি করছে না। আপনার বিরুদ্ধেও রেলের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। মির্জা আব্বাস : সম্ভবত ২০০৬ সালের একটি পত্রিকার রিপোর্ট আবারও কাট-পেস্ট করে আওয়ামী লীগের যারা আমার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, তারা এটি করেছে। বিভিন্ন ব্লগাররাও এটা বলছে। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, পুরো শাজাহানপুর এলাকার অর্ধেকটাই আমার পৈতৃক ও আত্মীয়স্বজনের সম্পত্তি। রেলওয়ে ১৯৫৭-৫৮ ও ১৯৫৯-৬০ সালে অধিগ্রহণ করেছে। আজকে বলা হচ্ছে, আমি নাকি রেলের জমি দখল করেছি! বরং রেলওয়ে আমার জমি দখল করেছে।
এটা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে তাদের বলব, এই জমিতে আমরা ৮ পুরুষ বসবাস করি। তখন ঢাকা শহরে রেলওয়ের জন্ম হয়নি। এর আগে থেকেই আমরা বসবাস করি। আসলে আমাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এটা করা হচ্ছে। বিএনপির ব্যাপারে নেতিবাচক প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ড. ইউনূসের বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে।
বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? মির্জা আব্বাস: আসলে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর হাতে প্রচুর টাকা। তারা দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে থেকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন লোককে প্রভাবিত করে ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লোককে টাকা দিয়ে লেখাচ্ছে।
বিষয়টা হলো, যারা বলছে যে, ড. ইউনূসকে ৫ বছর ক্ষমতায় রাখার কথা। এটা হলে ক্ষতিটা তো ড. ইউনূসের হবেই সঙ্গে দেশেরও ক্ষতি হবে। তারা ইউনূসের সম্মান তো শেষ করবেন, সঙ্গে দেশটাকেও ধ্বংস করবেন।
কারণ হলো, আজকে যারা ইউনূস সাহেবকে ৫ বছর ক্ষমতায় রাখার কথা বলছে ও চেষ্টা করছে তারাই কিন্তু ইউনূসকে অজনপ্রিয়তার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এভাবে তাকে (ইউনূস) পচাবে এবং তার সমগ্র অর্জন শেষ করে দেবে। কেননা, একটা অনির্বাচিত সরকার তো ক্ষমতায় থাকলে দেশ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
তবে ড. ইউনূস সাহেব ৫ কেন, যতদিন আয়ু আছে ততদিন থাকুন। তবে সেটা নিয়ম মেনে (নির্বাচনের মাধ্যমে) হতে হবে। তিনি দল করতে চাইলে করবেন। প্রধানমন্ত্রী হোন আর প্রধান উপদেষ্টা হোন, সেটা যাতে নিয়মের মাধ্যমে হয়; কিন্তু এভাবে তো থাকা যাবে না। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে। তবুও তিনি দেশে আসছেন না কেন? জিয়া পরিবার নিয়ে কোনো চক্রান্ত আছে কি না?
মির্জা আব্বাস: তারেক রহমানের পরিবার তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন দিয়ে ও জীবন বাজি রেখে দেশটাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। আজকে একটা বাচ্চা ছেলে বলছে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করেছিলেন। আরে ভাই জিয়াউর রহমানের সময় ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করা আর এখন দল গঠন করা কিন্তু এক কথা নয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার আগেই ক্ষমতায় ছিলেন।
সেটা হলো তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জনগণের মনে স্থান করে নেন। ওই সময়ই বিএনপি হয়ে গেছে। যদিও নামকরণ হয়নি। জিয়াউর রহমানের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তখন থেকেই শুরু হয়। তারপর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আরেকবার দেশটাকে বাঁচালেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তাকে বন্দি অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষ ও সিপাহিরা জেল খানা থেকে মুক্ত করেন। তখন তো উনারও ফাঁসি হতে পারত। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছেন দেশের মাটিতে থেকে।
অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারের মতো উনার দেশের বাইরে অফিস ছিল না। অফিস ছিল সিলেটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। জিয়াউর রহমান কমান্ডও করেছেন, যুদ্ধও করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ৭ নভেম্বর জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তারপর খালেদা জিয়া ঝুঁকি নিয়ে তিনি এখনো বেঁচে আছেন। যদিও তাকে স্লো পয়জনিং (হাসিনার আমলে) করা হয়েছে। তবে দেশের মানুষের কামনা ও প্রত্যাশা এই যে, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে আসুক।
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয় না অনেক বছর। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে দলের কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না? মির্জা আব্বাস: আসলে দলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়াটা প্রয়োজন। বিএনপির মতো বড় দল নয় শুধু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে কোনো দলের কাউন্সিল হওয়া দরকার। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। তার অর্থ এই না যে, আমাদের কাউন্সিল হচ্ছে না।
আমাদের কিন্তু বর্ধিত সভা হয়েছে। এটাকে আমরা কাউন্সিলের অংশ হিসেবে বলতে পারি। তবে যেটা ফরমাল কাউন্সিল যেখানে ইলেকশন বা সিলেকশন হয় সেটা হয়নি। এখন আগামী নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সেটাকে প্রয়োজন মনে করছি না আমরা।