বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ হাসানকে শোকজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর শাখার মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের চাঁদা দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে শোকজ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১০টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখ্য সংগঠক আলী মিলন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এদিকে চাঁদা দাবির ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে নাহিদ হাসান খন্দকারকে দেখা গেলেও অপর পাশে থাকা ব্যক্তিকে দেখা যায়নি। ভিডিওটি কবে এবং কোথায় ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পুকুর খনন করে বালু উত্তোলন ও পার্ক নির্মাণের বিষয়ে নাহিদ হাসান খন্দকারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল অপর পাশে থাকা এক ব্যক্তির। সেখানে অপর পাশে থাকা ব্যক্তিটি নাহিদ হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি যদি বলো সেখানে বালুর ব্যবসা হচ্ছে, তাহলে সেটা বন্ধ করে দেই। এক লাখ টাকা দিতে পারব না, পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছি।’ এ সময় নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, ‘ব্যবসা আপনি বন্ধ করবেন কেন, ব্যবসা আপনিই চালান। ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়োজনে সময় নেন, ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।’ নাহিদ হাসান আরও বলেন, ‘আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে। ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে। যদি মনে হয় কিছু কমাবেন তাহলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আমি চাই না আপনাদের কোনো সমস্যা হোক। জানেন তো সংগঠন চালাতে হলে কী কী করতে হয়।’ পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন নাহিদ হাসান।
তিনি বলেন, ‘হাজিরহাট এলাকার ওদিকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে আমরা চারজন সেখানে যাই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের কথা বললে তারা কিছু দিতে চেয়েছিল, কিন্তু রাজি হইনি। এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়নি। আমাদের ফাঁসানোর জন্য তারা এই কাজটি করা হয়েছে।’ এ সময় চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, ‘কেউ টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারবে না। কেননা আমি এমন কোনো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত নই।’ জানতে চাইলে গ্রিন সিটি ইকো পার্কের প্রকল্প ম্যানেজার বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার পার্কে পুকুর তৈরিতে খনন কাজ চলছিল। অবৈধ বালু উত্তোলন করছি- এমন অভিযোগ করে নাহিদ হাসান আমার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দাবির বিষয়ে কল রেকর্ডও আছে।যা ইতোমধ্যে আমি প্রকাশ করেছি।’
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মেদ ইমতি বলেন, ‘মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে সেটি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের টিম তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কেউ তাকেসহ এই প্লাটফর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের পেজে এসব বেশি প্রচারণা করা হচ্ছে। তার অডিও ক্লিপটি আমাদের কাছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে এজন্য আমরা শোকজের মাধ্যমে তার কাছে জবাব চেয়েছি।’ সেই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের একটি টিম এই বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কোরাম মিটিংয়ের মাধ্যমে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঘোষিত কমিটিতে ইউল্যাব শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহম্মেদ ইমতিকে আহ্বায়ক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রহমত আলীকে সদস্যসচিব করে ৬ মাস মেয়াদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের ১১২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ করা হয়। এতে রংপুর ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান খন্দকারকে মুখপাত্র করা হয়।