শরীরের এই ৫ জায়গায় ব্যথা মানে কিডনি বিপদে! বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি রক্ত পরিশোধন, শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মতো কাজ করে। কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীর কিছু সতর্কবার্তা দেয়-যা সবসময় কিডনির আশেপাশে সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির সমস্যায় কোমর, পেট, কুঁচকি, পা-গোড়ালি এমনকি বুকে পর্যন্ত ব্যথা দেখা দিতে পারে।
এসব উপসর্গ কিডনিতে পাথর, সংক্রমণ বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। সময়মতো এসব লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারলে চিকিৎসা নিয়ে জটিলতা কমানো সম্ভব। কিডনি সমস্যায় শরীরের যেসব স্থানে ব্যথা হতে পারে- ১. কোমরের পাশের অংশ (ফ্ল্যাঙ্ক এরিয়া): কিডনির সমস্যার সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ হলো কোমরের দুই পাশের পাঁজর ও নিতম্বের মাঝের অংশে ব্যথা। ব্যথার ধরন: এক বা দুই পাশে ভোঁতা ব্যথা, অথবা ঢেউয়ের মতো তীব্র ধারালো ব্যথা (বিশেষ করে কিডনিতে পাথর থাকলে)। কারণ: কিডনিতে প্রদাহ, সংক্রমণ বা ব্লকেজ হলে এই ব্যথা হয়, যা সাধারণ পিঠের ব্যথার মতো বিশ্রাম বা মালিশে কমে না। ২. পেটের ব্যথা: সবসময় কিডনির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও, কিডনির সংক্রমণ বা ব্লকেজের কারণে পেটের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যথার ধরন: নিচের পেটে ক্র্যাম্প বা চাপ অনুভব, হঠাৎ তীব্র ব্যথা ও বমিভাব (বিশেষ করে পাথর থাকলে)।
কারণ: কিডনিতে চাপ বা মূত্রনালিতে বাধা সৃষ্টি হলে ব্যথা পেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। ৩. কুঁচকি ও পেলভিক এলাকায় ব্যথা: কিডনি থেকে ব্যথা নিচের দিকে কুঁচকি বা পেলভিক অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে, বিশেষ করে কিডনিতে পাথর বা গুরুতর সংক্রমণের সময়। ব্যথার ধরন: আসা-যাওয়া করা তীব্র ব্যথা, পেলভিক অঞ্চলে স্থায়ী ব্যথা, মূত্রত্যাগে অস্বস্তি বা হঠাৎ প্রস্রাবের তাগিদ। কারণ: কিডনি ও ব্লাডারের মাঝে থাকা ইউরেটার দিয়ে পাথর বা বাধা অতিক্রম করার সময় স্নায়ুতে চাপ পড়ে ব্যথা হয়। ৪. পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতা: কিডনির সমস্যা হলে তরল জমে গিয়ে পা-গোড়ালি ফুলে যায়, আবার স্নায়ুর ক্ষতির কারণেও ব্যথা হতে পারে। ব্যথার ধরন: পায়ের পেশীতে ক্র্যাম্প বা ব্যথা, গোড়ালি ফুলে যাওয়া, পায়ে জ্বালাপোড়া বা ঝিনঝিন ভাব। কারণ: কিডনি সঠিকভাবে অতিরিক্ত তরল বের করতে না পারলে (ইডিমা) ফোলা হয়। রক্তে বর্জ্য জমে স্নায়ুর ক্ষতি হলে (ইউরেমিক নিউরোপ্যাথি) ব্যথা বা অবশভাব দেখা দেয়। ৫. বুকে ও পাঁজরের নিচে ব্যথা: যদিও সরাসরি কিডনি থেকে হয় না, তবে কিডনির জটিলতার কারণে ফুসফুস বা হৃদপিণ্ডের চারপাশে তরল জমা, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা বা পেরিকার্ডাইটিস হলে বুকে ব্যথা হতে পারে। ব্যথার ধরন: বুকে চাপ অনুভব, পাঁজরের নিচে ব্যথা, শ্বাস নিতে বা শোয়া অবস্থায় ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
কারণ: কিডনির গুরুতর রোগে তরল জমে গিয়ে বা পেশীর খিঁচুনিতে এই ব্যথা হতে পারে। কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন? তীব্র কোমরের পাশের ব্যথা, ব্যথা কুঁচকি পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে সমস্যা বা রক্ত আসা, পা-গোড়ালি ফুলে যাওয়া, বুকে ব্যথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত, যাতে কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি কমানো যায়।