বিমান বাহিনীর ভিতরে ভারতীয় ‘র’ নেটওয়ার্ক,ভয়াবহ তথ্য ফাঁস

বিমান বাহিনীর ভিতরে ভারতীয় ‘র’ নেটওয়ার্ক,ভয়াবহ তথ্য ফাঁস

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ দুপুরে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তার পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও দৃশ্যের সঙ্গে সবাই পরিচিত। হাসিনার পালানোর এই একটিমাত্র ছবি। কে তুলেছেন এই ছবি এবং কে ধারণ করেছেন এই ভিডিও? সঙ্গে সঙ্গে নেট দুনিয়ায় ভিডিওটি আবার ছড়িয়ে দিলোই বা কে?

এয়ার ইন্টেলিজেন্স এই ঘটনার অনুসন্ধান এবং ছবি ধারণকারী ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে উদঘাটন করল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অভ্যন্তরের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এক নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফকে ইতোমধ্যে কোর্ট মার্শাল করে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলে বন্দি আছেন। ‘র’ সংশ্লিষ্টতায় বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ ৬ কর্মকর্তা- এয়ার ভাইস মার্শাল এম এ আউয়াল হোসেন, এয়ার ভাইস মার্শাল জাহিদুল সাঈদ, এয়ার কমডোর মোহাম্মদ আমিনুল হক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক, গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শামীম ও উইং কমান্ডার সাইয়েদ মোহাম্মদকে শনাক্ত করে তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।


আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এই খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর পরিচালক লে. কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী আমার দেশকে জানান, বিমান বাহিনীর এই ছয় অফিসার স্বাভাবিক অবসরে গেছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের ভেতরে ‘র’-এর শ্যাডো রিক্রুটার হিসেবে কাজ করতেন স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ। এয়ার ইন্টেলিজেন্স তাকে আইডেন্টিফাই করার পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট ডিজিএফআইর হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। তার ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ভারতীয় প্যারা কমান্ডোর ব্যবহার করা দুটি এফএন-৯০ এবং সিগপি-২২৯ রাইফেল ও এক কোটি নগদ টাকাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ভারতীয় ‘র’-এর সক্রিয় এই এজেন্টকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ছবি ধারণ করা বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে ধরতে গিয়ে। বিমান বাহিনীর কুর্মিটোলা এয়ারবেইসের অফিসার্স মেসের জানালা থেকে ছবিটি তুলেছিলেন ফ্লাইট লে. রিফাত আশরাফী। আর ছবিটি নেটে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহসিফ সুরি। তাদের দুজনকেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ফ্লাইট লে. রিফাত আশরাফী প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার পলায়ন দৃশ্য কেবল এক অ্যাঙ্গেলের ভিডিও থেকেই দেখা যায়। এই ছবির সূত্র ধরে শুরু হয় এয়ার ইন্টেলিজেন্সের গোপন তদন্ত। এতে পরিষ্কার হয়ে যায়, এই ভিডিও করেছেন মাত্র একজন এবং সেটা বেশ দূর থেকে। ভিডিও করার অ্যাঙ্গেল, অবস্থান ও ক্যামেরা প্যান করার পর্যবেক্ষণ করে এয়ার ইন্টেলিজেন্স কোন কক্ষ থেকে এবং কে এই ভিডিও দৃশ্য ধারণ করেন তা আইডেন্টিফাই করতে সক্ষম হয়। ফ্লাইট লে. রিফাত আশরাফীকে ধরা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তার অফিসের রুমের জানালা থেকে তিনি ছবিটি তুলেছেন। শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর সি-১৩০-জে বিমানে করে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে কলকাতা হয়ে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার পলায়নের এই রুট এবং বিমানে করে যাচ্ছেন সে কথা যাতে জানাজানি না হয়ে যায় সেজন্য ছবিটি তোলা ও ভাইরাল করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরা পালিয়ে যাচ্ছেন-আগেই এই ন্যারেটিভকে এস্টাবলিশড করা।

ছবি ধারণকারী রিফাতের মোবাইল ফরেনসিক করার সময় তদন্তকারী এয়ার ইন্টেলিজেন্স আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের যোগসূত্রতা আবিষ্কার করা হয়। জানা যায়, তিনি ‘র’-এর সক্রিয় এজেন্ট।

এয়ার ইন্টেলিজেন্স প্রথমে আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ে। বড় ঘটনা বুঝতে পেরে এয়ার ইন্টেলিজেন্স বিষয়টি ডিজিএফআইর নজরে আনে। ডিজিএফআই ১৪ আগস্ট ২০২৪ তাকে আটক করে বিষয়টি সম্পর্কে অধিকতর তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ‘র’-এর সঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের জড়িত থাকা প্রমাণিত হয়। কোর্ট মার্শালে তার ১০ বছরের জেল হয়। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। এ ব্যাপারে ওই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি সেলে আছেন। বিমান বাহিনী অ্যাক্টের অধীনে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কোর্ট মার্শালে ১০ বছরের সাজা হয়েছে তার। ৭/৮ মাস আগে তাকে এই কারাগারে পাঠানো হয়। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ‘র’-এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিমান বাহিনীর এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

আমার দেশ অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এ ঘটনার তদন্তে শুধু এয়ার ফোর্সের ৬ জন অফিসারই নন, আরো ‘পারমানেন্টলি সাসপেন্ড’ দেখানো হয়েছে ৪ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে। এরা হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর ডিভিশনের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লাহ, গুলশান ডিভিশনের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার রফিকুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী জোনের ট্রাফিক অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার তানজিল আহমেদ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অ্যাসিসট্যান্ট সুপারিন্টেডেন্ট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এরা সবাই ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। এদের স্টেশন মাস্টার ছিলেন গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতেখার মাহমুদ (ডিবি)। এই পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন বিমান বাহিনীতে ‘র’-এর সক্রিয় এজেন্ট স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর এদের মূল কমান্ডার ছিলেন বাংলাদেশে ‘র’ নেটওয়ার্কের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল মুজিবুর রহমান, যিনি জেনারেল মুজিব নামে পরিচিত।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে- ভারতীয় ইন্টেলিজেন্সের পক্ষে শ্যাডো এজেন্ট হিসেবে কাজ করায় ‘র’ স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফকে একটি ব্র্যান্ড নিউ হুন্দাই গাড়ি উপহার দিয়েছে। তাছাড়া ‘র’-এর পক্ষ থেকে তার কাছে নিয়মিত সুন্দরী নারী পাঠানো হতো।

ফ্লাইট লে. রিফাত ও ফ্লাইট লে. তাহসিফ

তদন্তে প্রমাণ মেলে যে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রিফাত আশরাফীর মোবাইলে ধারণ করা শেখ হাসিনার পালানোর সেই ভিডিও ফেসবুকে নিজের টাইমলাইন থেকে পোস্ট করেছিলেন বিমান বাহিনীর আরেক কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহসিফ সুরি। আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় তাহসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘কোন ভিডিও? আপনি কোন প্রসঙ্গে বলছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।’ তাকে যখন বিস্তারিত জানানো হয় এই তদন্তের সব তথ্য এবং প্রমাণ আমার দেশ-এর কাছে রয়েছে, তখন তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘আরে ভাই, ওই ভিডিও পোস্ট করে তো অনেকেই অনেক টাকা উপার্জনও করেছেন। আর্থিক পুরস্কারও পেয়েছেন!’

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন তাহসিফ। বলেন, ‘আপনি আসেন, সাক্ষাৎ করেন আমরা মুখোমুখি বসে কথা বলব। জানেনই তো এখন সবারই টেলিফোন কল রেকর্ড হয়।’ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা রিফাত ভিডিওটি করেছেন বললে তিনি বলেন, কোন রিফাত? ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রিফাত আশরাফী?

তাহসিফ সুরির সঙ্গে টেলিফোনে কথাবার্তার শুরুটা হয় ক্রিকেট নিয়ে। ক্রিকেট বোর্ডের অ্যান্টি করাপশন ইউনিট (আকসু)-এর সহযোগী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। সর্বশেষ বিপিএলেও এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদের ‘র’ সংশ্লিষ্টতা ও গ্রেপ্তার

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর স্টেশন মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার (ডিবি) ইফতেখার মাহমুদ। তিনি ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

৫ আগস্ট ২০২৪ অস্ত্রসহ ইফতেখার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের সহায়তায় এয়ার ফোর্সের বাসভবন ফ্যালকন টাওয়ারে আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। এদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের ‘র’ কানেকশন ফাঁস হয়ে যায় এবং তিনি গ্রেপ্তার হন। একই কানেকশনে গ্রেপ্তার হন পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখার। তার এই গ্রেপ্তার গোপন ছিল। তার স্ত্রী সাবা তাহসিন স্বামীর কোনো খোঁজ না পেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর ইফতেখারের নিখোঁজ বিষয়ে একটি আবেদন জানান। তিনি আবেদনে লেখেন : ইফতেখার মাহমুদের সঙ্গে ইস্যুকৃত অস্ত্র ছিল। গত বছরের ৬ থেকে ১০ আগস্ট ইফতেখার এয়ার ফোর্স অফিসার বন্ধুর কাছে ফ্যালকন টাওয়ারে অস্ত্রসহ আশ্রয়ে ছিলেন। এরপর ১১ আগস্ট বাসায় ফেরেন। তার অস্ত্রটি ইফতেখারের হেফাজতে রেখে আসেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে অস্ত্রটির জন্য তাকে ফোন করা হয়। পরে জানা যায়, তিনি হাউস অ্যারেস্ট। ১৭ আগস্ট ইস্যুকৃত অস্ত্রের বিষয়ে তেজগাঁও থানায় জিডি করা হয়। ২২ আগস্ট একটি ফোন আসায় ইফতেখার সকাল সাড়ে ১০টায় বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ড্রাইভার তাকে এয়ার ফোর্স হেডকোয়ার্টারে নামিয়ে দেন এবং তাকে রিসিভ করে ভেতরে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।

এ বিষয়ে জানার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, ইফতেখারকে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তালিবুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারের পর তিনি কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলে বন্দি আছেন। তাকে পুলিশ বাহিনী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

হাসিনার পালানোর সেই ভিডিও রহস্য

‘৩৬ জুলাই ২০২৪’। সকালের সূর্যের কিরণেই ছড়িয়ে পড়েছিল গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার বার্তা। সব মিছিলের স্লোগান তখন একটাই- হটাও স্বৈরাচার। ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করো। স্বৈরাচার শাসক শেখ হাসিনাকে হটানোর একদফার দাবিতে তখন পুরো দেশ আন্দোলিত। রাজধানী ঢাকা শহর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে প্রকম্পিত। ঘর ছেড়ে শহরের চারদিক থেকে বেরিয়ে আসছে প্রতিবাদী লাখ লাখ মানুষ। কপালে বাঁধা লাল-সবুজের পতাকা। মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে তারা দৃঢ় গলায় জানিয়ে দিল, ‘শোনো মহাজন, আমরা অনেকজন!’ পেছনের ১৫ বছরের কুশাসনে নিষ্পেষিত জনতা জেগেছে ভোটাধিকার আদায় ও ফ্যাসিস্ট সরকারকে গদিচ্যুত করার দৃঢ়তা নিয়ে। এই আন্দোলনে যে জনতার জয় হচ্ছে সেই আলো ছড়িয়েই ‘৩৬ জুলাই’-এর সূর্যের তেজে তপ্ত হলো প্রিয় মাতৃভূমি।

দুপুর গড়াতেই এক অভাবনীয় ঘটনার সাক্ষী হলো পুরো জাতি। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রসংলগ্ন বাণিজ্যমেলার মাঠ থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে উড়ে এলো শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টার। এরপর তিনি দিল্লি পালিয়ে গেলেন। যে বিমানবন্দর একসময় তার নিরাপত্তার ঘাঁটি ছিল, ৫ আগস্টের দুপুর সেটাই হলো তার গোপন পালানোর পথ। এই নীরব, তবে কাঁপন তোলা ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে খানিকক্ষণের মধ্যেই। পুরো বিশ্বের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমজুড়ে তখন একটাই খবর-শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন!

হাসিনার এই পালানোর দৃশ্য কেবল এক অ্যাঙ্গেলের ভিডিও থেকেই দেখা যায়। এতেই পরিষ্কার এই ভিডিও করেছেন মাত্র একজন এবং সেটা বেশ খানিক দূর থেকে, নিজেকে আড়ালে রেখে, লুকিয়ে। আমার দেশ-এর দীর্ঘদিনের এক অনুসন্ধান জানাচ্ছে, খানিকটা দূর থেকে এই ভিডিও যিনি তার নিজস্ব মোবাইলে ধারণ করেছিলেন তিনি ছিলেন স্বয়ং বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রিফাত আশরাফী। কুর্মিটোলা বিমানবন্দরের সেই নির্জন স্থান ছিল নিরাপত্তায় ঘেরা। বাইরের কেউ বা কারো সেখানে প্রবেশের কোনো উপায় ছিল না। অনুসন্ধানে নিশ্চিত প্রমাণ মেলে যে কাছের কুর্মিটোলা এয়ারবেইসের অফিসার মেস থেকে মোবাইল ফোনে শেখ হাসিনার এই পালানোর দৃশ্য রেকর্ড করা হয়। ছবির অ্যাঙ্গেল, অবস্থান ও ক্যামেরা প্যান করার পর্যবেক্ষণ করে তদন্ত দল নিশ্চিত হয় কোন কক্ষ থেকে এবং কে এই পুরো ভিডিওর দৃশ্য ধারণ করেছেন। তাকে আটক করা হয়।

তদন্ত যত গড়িয়েছে, বেরিয়ে এসেছে আরো ভয়ংকর তথ্য। আটক বিমান বাহিনীর সেই কর্মকর্তার মোবাইল ফরেনসিক করে আরেক কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফের বিমান বাহিনীতে ‘র’-এর শ্যাডো এজেন্ট হিসেবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করছিলেন।

এই তদন্তে বেরিয়ে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বিমান বাহিনীর একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ‘র’ নেটওয়ার্কে জড়িত।

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশের সামরিক কাঠামোতেও ঢুকে পড়েছে বিদেশি গোয়েন্দা শক্তির কালো হাত। এটি শুধু একটি বাহিনীর নয়, বরং পুরো দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা।

সুত্রঃ দৈনিক আমার দেশ