চাঁদার দাবি ও ময়লার ব্যবসা দখল করতে গিয়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালালেন তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সেলিম ও আরিফ মোল্লারা!

রাজধানীর গুলশান গোল চত্ত্বরসংলগ্ন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দকৃত একটি জায়গা ও ময়লার ব্যবসা দখল এবং মোটা অংকের চাঁদা আদায় করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক ও ধাওয়া খেল তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের বেশ কিছু নেতাকর্মীরা। পুলিশ বলছে- এরা তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজার নির্দেশে বেশ কয়েকদিন ধরে দখল বাণিজ্য ও চাঁদার দাবি করে আসছিল। আজ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য সদস্যরা অস্ত্রসহ উপস্থিত হয়ে ধাওয়া দেয়। এতে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও বাকি কয়েক জন ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে। এসময় সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ তাদের ধাওয়া-দেওয়ার সময় পাশাপাশি গুলশান থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনে নেতাকর্মীরা পুলিশকে সহায়তা করেন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক সদস্যরা অস্ত্রসহ তাদের দৌড়ানি দিলে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এবং যারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তারা সবাই সেলিম এবং আরিফ মোল্লার সমর্থক ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ হাফিজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।
জানা যায়, এর অধিকাংশ নেতাকর্মী হলো তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজা ও যুগ্ন আহবায়ক আরিফ মোল্লার। ৫ আগস্টের পর ডাকাতি, চুরি ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয় ছাত্রদলের দুই নেতা। এর আগে মহাখালীর দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরি করে নিয়ে যান ছাত্রদলের এই দুই নেতা ও তাদের লোকজন। আরিফ মোল্লা নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে সেলিম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন এটা আরেক মোল্লারা করতে পারে।
বনানীর ময়লার ব্যবসা ও তাদের লোক নিয়ন্ত্রণ করবে অন্যথায় মোটা অংকের চাঁদা দিতে হবে এমন হুমকি দিয়ে ব্যবসাতে কেড়ে নিতে যান তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের এই নেতা। বনানী থানা বিএনপির সাবেক এক আহ্বায়ক এসব জানান।
বনানী থানা পুলিশের সূত্র মতে ও মহাখালী কড়াইল বস্তির অবৈধ পানি বিদ্যুৎ গ্যাস থেকে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিএনপি নেতা খুরুমের কাছ থেকে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নামে চাঁদা নেন সেলিম। এই টাকা তিনি একাই সংগ্রহ করেন। তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নেতা রাকিব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সাবেক এক সাংগঠনিক এসব তথ্য জানান।
এই বিষয়ে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক এক আহ্বায়ক জানান, আমাদের তিতুমীর কলেজের নামে যে সমস্ত জায়গা থেকে বিভিন্ন অর্থ বরাদ্দ আছে সেগুলো যুগ্ন আহবায়ক ইমাম অন্যদের মাঝে বন্টন করে দিতে চাইলেও সদস্য সচিব সেলিম রেজা সেগুলোর ভাগ কাউকে দিতে চান না। তার কাছে যদি কেউ অনুদান বা বরাদ্দর টাকা ভাগ দেয় তাহলে সে বলেন আমি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিব ইসলাম রাকিবের লোক। রাকিব থাকাকালীন এসব টাকা কাউকে ভাগ দেওয়া যাবে না।
তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নেতা সেলিম রেজা, ও যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ মোল্লা একত্রিত হয়ে সিন্টিকেট ধান্দায় ব্যস্ত সময় পার করছে। যদি ও আরিফ মোল্লাকে অধিকাংশ সময় ব্যবহার করেন সেলিম রেজাকে। তবে তাদের বিরুদ্ধে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের কেউ কথা বললে বা চাঁদা আদায়ের বিপক্ষে প্রতিরোধ করলে তারা সম্মিলিত হয়ে একটা মব সৃষ্টি করে ঘটনার মোড় অন্যদিকে ক্ষমতার জোরে নিয়ে যেতে চাই।
কলেজ ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাব্বির জানান, ৫ আগস্টের দিন থেকে শুরু করে সেলিম ও আরিফ মোল্লা লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন। তবে এর মধ্যে বেশি কোটি টাকার বেশি রোজগার করেছেন সেলিম রেজা। সেলিম গ্রুপ মাঝে মাঝে ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে শক্তি ও বিস্তার করতে চাই। সেলিম ৫ আগষ্টের পর বাড্ডায় পাঁচ শতাংশের একটি জায়গা দখল করেছেন।
সেলিম রেজার সমর্থক ও ইন্দনে রুচিতা এবং অত্র এলাকার কয়েকটি মদের বারে হামলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই আতঙ্কের পর বার কর্তৃপক্ষ সেলিমকে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। মহাখালী এলাকার এমন কোন জায়গা নেই যে সেখান থেকে নিয়মিত মাসোহারা চাঁদা নেন না সেলিম ও তার সমর্থকরা। সেলিমের চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে প্রতি মাসের রোজগার আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেশি। এরমধ্যে মহাখালীর ৪ টা মদের বার থেকে ৪ লক্ষ টাকা সংগঠন চালানোর কথা বলি চাঁদা তোলেন। এছাড়া এই এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি মাসে ১২ লাখ টাকার পরিমাণ চাঁদা গ্রহণ করেন। বাকি টাকা স্পা, ট্রাভেলস ও অন্যান্য কোম্পানি থেকে হুমকি ধামকি দিয়ে জোরপূর্বক আদায় করেন।
এছাড়া সেলিম গ্রুপ আরো বেপরোয়া হওয়ার পিছনে রয়েছে তার কনিষ্ঠ ছোট ভাই মিডিয়াকর্মী রাজা। মূলত সেলিমের বিপক্ষে কেউ কথা বললে রাজা আধিপত্য প্রভাব বিস্তার করে ও সে সাবেক ছাত্রদল নেতা হওয়ার সুবাদ ছাত্রদলের প্রভাব একত্রিত করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের হুমকি ধামকি প্রদান করেন। তাছাড়া সেলিমের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে রাজা রাতের আঁধারে গিয়ে তাদের নির্যাতন-নিপীড়ন চালাই।
সেলিম গ্রুপ ও আরিফ মোল্লার এমন চাঁদাবাজির অসংখ্য তথ্য প্রমাণ মিলছে। তারা মহাখালী, গুলশান বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন এবং চাঁদার টাকার ভাগ নেন।
বনানীর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা চাঁন মিয়া বলেন, সেলিম গ্রুপ আমার এখানে এসেও খরচার টাকার দাবি করে।
এই বিষয়ে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজা একটি মাধ্যমে জানিয়েছেন , আজকের যে চাঁদাবাজির অভিযোগ এসেছে সেটা মিথ্যা। আপনার গ্রুপের লোকজন পুলিশকে বলেছে এবং সেখানে গিয়ে দৌড়ানি খেয়েছে আপনি তো এসব বিষয় সবকিছু জানেন। এবং কয়েকদিন সেখানে আধিপত্যের জন্য গিয়েছিলেন কিন্তু আজ এই ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশ বলছে সবাই আপনার লোক। এমন উত্তর মেলেনি।
চাঁদাবাজির টাকা নিয়মিত আদায়ের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার জানান, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সেলিম রেজা ও মোল্লার লোকজন নিয়মিত তাদের বরাদ্দকৃত মাসোহারা পাচ্ছেন। তবে কলেজের অন্য কেউ আমাদের এখানে আসেনা এবং কেউ এলে সেলিম রেজার কথা বলি এবং তিনি পরবর্তীতে কথা বলে নেন।
আপনারা তাকে এবং তাদের কেন দেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন হোটেল কর্তৃপক্ষ যদি তাদের দেয় তাহলে তো কিছু করার নেই। শুধু আমরা নয় এখানে যারা ব্যবসায়ী আছে সবাই তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের শুধু সেলিম রেজা নয় কাউকে না কাউকে দেয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাসেল আহমেদ জানান, চাঁদাবাজির ঘটনায় যদি কারোর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হয় বা আমাদের কাছে আসে তাহলে উপরে কথা বলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এক্ষেত্রে পুলিশ কাউকে ছাড় দেবে না এটা সরকারি সিদ্ধান্ত।