যে শর্তে হাসিনাকে ফেরত দেবে ভারত

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি দেশটির রাজধানী দিল্লিতে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত হয়ে তার তৃতীয় কোনও দেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশে এখন তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। বিচারের মুখোমুখি করতে পরবর্তী ধাপ হিসেবে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। প্রশ্ন হলো বিচারের মুখোমুখি হতে—দিল্লিতে অবস্থান করা হাসিনাকে কী ফেরত দেবে ভারত? এই বিষয়ে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কী কোনও চুক্তি আছে?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি তথ্য রয়েছে। তথ্যটি ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা আছে—সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও নেপালের প্রত্যর্পণ (অপরাধে অভিযুক্তদের ফেরত) চুক্তি রয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এসব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ছাড়াও—১৯৮৭ সালে সার্ক সন্ত্রাস দমন আঞ্চলিক সম্মেলন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২০০৪ সালে সার্কে এই চুক্তির অতিরিক্ত প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য থাকা বিধান, অর্থসংগ্রহ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি শক্তিশালী করা।
এই চুক্তির আরও লক্ষ্য ছিল—এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও অর্থায়ন প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই তথ্যে বলেছিল—২০১৬ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারত বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির ধারা ১০ (৩) সংশোধনের জন্য একটি চুক্তি করে। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো, দুই দেশের পলাতক আসামীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যর্পণ করা।
এতে আরও বলা হয়—কোনও পলাতক আসামী যেন বিচারের সম্মুখীন হওয়ার আওতার বাইরে না থাকেন, সেজন্য ভারত যতগুলো দেশের সঙ্গে সম্ভব ঠিক ততগুলো দেশের সঙ্গেই এই চুক্তি করবে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারী তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি করা হয়। এই চুক্তি অপরাধ কমাতে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সহায়ক হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
• কেবল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই হবে
২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি হয় সেটি ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। ওই সংশোধনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে যদি কাউকে প্রত্যর্পণ করতে হয় তাহলে কেবল পুলিশের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই হবে।
সংশোধনী আনা হয়েছিল তৎকালীন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামালের উপস্থিতিতে। চুক্তির এক সপ্তাহ আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তৎকালীন মন্ত্রিসভায় সভাপতিত্ব করে সংশোধনীর অনুমোদন দেন।
ওই সংশোধনীতে আরও বলা হয়, কোনও সন্দেহভাজন অপরাধীকে প্রত্যর্পণ করতে কোনও ধরনের প্রমাণেরও প্রয়োজন হবে না। যদি কাউকে প্রত্যর্পণ করতে হয়, তাহলে কেবল পুলিশের একটি পরোয়ানার প্রয়োজন হবে।
২০১৩ সালে যখন চুক্তিটি করা হয় তখন এতে বলা হয়েছিল, কোনও সন্দেহভাজন অপরাধীকে যদি ভারত কিংবা বাংলাদেশ বিচারের মুখোমুখি করতে চায়, তাহলে নির্দিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ থাকতে হবে।