যে কারনে তারেক রহমানকে টার্গেট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে অপশক্তিগুলো

যে কারনে তারেক রহমানকে টার্গেট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে অপশক্তিগুলো

চলমান পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে অগণতান্ত্রিক অপশক্তিকে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন চাইলে সব ধরনের সহযোগিতাও করবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত দেশকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফেরাতে চায়।

এদিকে দলটির নেতারা বলছেন, অগণতান্ত্রিক অপশক্তিগুলো এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান টার্গেট বানিয়েছে। তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা এখন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা থামাতে নানা অপতৎপরতা তারা দেখছেন। যা দুঃখজনজনক।

এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মব সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে আজ থেকে মাঠে নামছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন-যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ঢাকাসহ সারা দেশে ৩ দিন পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে সংগঠন তিনটি। বিএনপি নেতাদের অভিমত-দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। অথচ কোনো ধরনের অপকর্মের সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত থাকলেই সঙ্গে সঙ্গেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অনুরোধে অনেক ক্ষেত্রে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া যারা ‘মব সন্ত্রাস’ করে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সামাজিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের জন্য একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অকার্যকর মনে হচ্ছে। এটি কোনো অপশক্তিকে ষড়যন্ত্রের সুযোগ করে দেওয়ার অংশ কিনা-সে ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠছে জনমনে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশ ও জণগণের স্বার্থে বড় দল হিসাবে বিএনপি এই পরিস্থিতির উন্নতি চায়, এর সুরাহা চায়। 

নেতাদের আরও অভিমত-একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া থামাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। বিশেষ করে অপশক্তিগুলো এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান টার্গেট করেছে। দেখা যাচ্ছে, দেশে যখনই কোনো ইস্যুতে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ছায়াতলে থাকা চক্রান্তকারীরা (যারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় আছেন) তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্যবস্তু করে তোলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তারা সক্রিয়। ছদ্মবেশে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত দেশি-বিদেশি অপশক্তি।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানে দেশ পুনর্গঠনের তারেক রহমানের স্বপ্নই তার এবং তার দলের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অন্যতম প্রধান কারণ। হীনম্মন্যতা ও ঈর্ষা থেকে কিছু দল ও গোষ্ঠী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। যা অপরাজনীতি ছাড়া কিছু নয়। 

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে, তা পরিকল্পিত চক্রান্ত। সেই চক্রান্ত হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি উঠে আসছেন, যার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাকে নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু তারেক রহমানের অসাধারণ দক্ষতাই তাকে নেতৃত্বে এনেছে। তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা-যা খুব কম রাজনীতিবিদদের মধ্যে আছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিশাল একটা অংশকে সংগঠিত করে ফেলতে পারেন। তারেক রহমান নিঃসন্দেহে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের ভবিষ্যৎ। দেশের মানুষের আস্থার জায়গায় রয়েছেন। তাই বিএনপিকে এত সহজে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বিএনপি প্রতিবাদ করেছে। প্রমাণ করেছে যে বিএনপি ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠতে জানে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, ‘যেখানেই কোনো অপকর্মের অভিযোগ পেয়েছি, আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় দলের পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়েছে। এখন দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের। তবে এ নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতো সেই পুরোনো কালচার শুরু করেছে। তারা দোষারোপের রাজনীতি করছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ-কোনো অন্যায়কারীকে বিএনপি প্রশ্রয় দেবে না। সে যত বড় নেতা বা প্রভাবশালীই হোক না কেন। অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান জিরো টরারেন্স।’

বিএনপি নেতারা জানান, অভ্যুত্থানের পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য এবং অপকর্ম-অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিএনপি আন্তরিকতা দেখালেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা দেখাচ্ছে। যে কারণে অপরাধীরা প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে অপরাধ করছে। 

নেতারা আরও বলেন, সর্বশেষ মিটফোর্ডে একজন ব্যাবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মী জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে, সঙ্গে সঙ্গে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে। বিএনপি তো সরকারি দল নয়। তাই এখন সব দায়িত্ব হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বর্তমান সরকারের। কিন্তু এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা সুস্থধারার রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। এসব অপরাজনীতি করে জনগণকে প্রভাবিত করা যাবে না। 

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম মনে করেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট বিএনপির মূল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পতন হয়। এর ফলে একক রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিএনপির উত্থান ঘটে। সার্বিক বিবেচনায় এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতার বিচারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছাকাছিও আর কোনো নেতা নেই। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে পরবর্তী সরকার গঠিত হবে-এটি বলাই যায়। আমার ধারণা- রাজনৈতিকভাবে ভোটের মাধ্যমে তাকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো তার বিরুদ্ধে সক্রিয়। তারেক রহমানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে সেই শক্তিগুলো। বিএনপিকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এখন বাস্তবতা হচ্ছে তারেক রহমান শুধু দলের নেতাই নন, বরং দেশের সম্পদ।’ 

মাঠে নামছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল : ‘গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে’ আজ ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করবে ছাত্রদল। রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করবে সংগঠনটি। এদিকে ‘সারা দেশে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে’ কাল মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে স্বেচ্ছাসেবক দল। এদিন রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে বেলা ৩টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইল-শান্তিনগর-মালিবাগ মোড়-মৌচাক-মগবাজার-বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করবে। 

অন্যদিকে একই দাবিতে বৃহস্পতিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুবদলও। ওই দিন দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠনটি নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, মৎস্যভবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করবে।