জালে নেই মাছ সাগরে ঝুঁকি দুশ্চিন্তায় বরগুনার জেলে পরিবার

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা: গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকার চার শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে পারছে না। কঠিন আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরায় বিরতি পড়ায় কয়েক হাজার জেলে এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রলার মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। স্থানীয় বাজারে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সংকটও দেখা দিয়েছে।
মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সরকার গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেই সময়ে জেলেরা সাগরে গিয়ে ট্রলারভর্তি ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে ফেরার আশা করেছিল। এছাড়া ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীরাও মাছ আহরণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু নিম্নচাপের কারণে তাদের প্রত্যাশা স্তূপে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ‑পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তার কারণে ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪–৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৮ মিমি‑এর বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস এবং শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় জেলে ছগির হোসেন, মনির মিয়া, আনিচুর রহমান ও এমাদুল হোসেন জানিয়েছেন, ইলিশের মৌসুমে সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়, আর নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই সাগরে নিম্নচাপ শুরু হয়ে যায়। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা সমুদ্রে যেতে পারছেন না। ঝুঁকি নিয়ে যারা গিয়েছেন, তারাও খালি হাতে ফিরে এসেছেন। ফলে তেল, বরফ ও বাজার খরচ সবই লোকসান। “প্রতিবছর এমন হলে মাছে–ভাতে বাঙালি পরিচয়টাই হারিয়ে যাবে,” বলেন তারা।
ট্রলার মালিক আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, “গত এক মাসে আমার তিনটি ট্রলারে ১৪ লাখ টাকার বাজারসামগ্রী নিয়ে সমুদ্রে পাঠিয়েছি। কিন্তু মাছ বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র চার লাখ টাকার। প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এভাবে যদি আবহাওয়ার বৈরীতায় অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে আমাদের পেশাটি ছাড়তে হবে।”
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপকূলের চার শতাধিক ট্রলার ঘাটে নোঙর করে অলস সময় কাটাচ্ছে। একদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব মিলিয়ে জেলেরা চরম দুরবস্থায় পড়েছে। গভীর সমুদ্রে ইলিশও কমে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রিপে ট্রলার মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। মাছ নির্ভর এই অঞ্চলের মানুষের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত জেলেদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা।