জল্পনা-কল্পনার অবসান, অবশেষে জনসমক্ষে খামেনি!

জল্পনা-কল্পনার অবসান, অবশেষে জনসমক্ষে খামেনি!

টানা ১২ দিনের তীব্র সংঘাত শেষে এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি চলছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে। সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ এক সংঘাত ছিল এটি, যেখানে ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় ৭ শতাধিক মানুষ মারা গেছে ইরানের।

সেইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ২৪ জন শীর্ষ কমান্ডার ও ১৪ জন পরমাণু বিজ্ঞানীও হারিয়েছে ইরান। এ ছাড়া টার্গেটে ছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও। এককথায় ইরানের কোমর একেবারে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েলের। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সংঘাত শুরুর পরই আত্মগোপনে চলে যান খামেনি।

কিন্তু, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দেখা নেই তার। দিন যতো গড়াতে থাকে, দানা বাঁধতে থাকে শঙ্কা; ডানা মেলতে থাকে নানা জল্পনা-কল্পনা। খামেনির অনুপস্থিতি বিশেষভাবে ভাবিয়ে তোলে যখন মহররমের অনুষ্ঠানেও দেখা গেল না তাকে। পুরো ইরান এবং সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে মানুষের জিজ্ঞাসা- তিনি কি আত্মগোপনে আছেন, দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, গুরুতর অসুস্থ, নাকি মারা গেছেন?

 আরও পড়ুনঃ ‘কঠিন মার’ খেয়েছে ইসরায়েল, সামনে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য-প্রমাণ অবশেষে অবসান ঘটলো সব জল্পনা-কল্পনার। দীর্ঘ ২৬ দিন পর জনসমক্ষে উপস্থিত হলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। পবিত্র আশুরার আগের দিন শনিবার (৫ জুলাই) তেহরানের একটি মসজিদে আয়োজিত এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখা গেছে তাকে। বিজ্ঞাপন রোববার (৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। গত ১৩ জুন শুরু ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধের সময় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন।

এরপর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর শুরু হওয়া ১২ দিনের এই যুদ্ধে জনসমক্ষে দেখা যায়নি খামেনিকে। কেবলমাত্র তিনটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। খবর ছড়িয়ে পড়ে, তিনি হয়তো গোপন বাংকারে লুকিয়ে আছেন। তবে, সংঘাত থামার পরও তার দেখা না মেলায় গাঢ় হতে থাকে সন্দেহ।

আরও পড়ুনঃ পেট্রল পাম্পকর্মীকে এক থাপ্পড় মেরে সাত থাপ্পড় খেলেন পুলিশ কর্মকর্তা তবে শনিবার খামেনির সরাসরি উপস্থিতি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয় এবং টেলিভিশনে তাকে দেখে সমর্থকদের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রবীণ শিয়া ধর্মীয় নেতা মাহমুদ কারিমিকে তিনি অনুরোধ করছেন দেশাত্মবোধক গান “ও ইরান” পরিবেশন করতে, যা সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি তেহরানের ইমাম খোমেইনি মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়, যা ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতার নামে নামকরণ করা।

খামেনির এই উপস্থিতি এমন এক সময়ে হলো, যখন ইরানসহ গোটা শিয়া বিশ্ব মহররম মাসের শোক পালন করছে। মহররমের দশম দিন পবিত্র আশুরা, যেদিন মুসলিমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেইনের শাহাদত স্মরণ করেন। আরও পড়ুনঃ নয়াদিল্লিকে সংলাপের প্রস্তাব দিলেন শেহবাজ এর আগে, গত ২৬ জুন খামেনি রাষ্ট্রীয় টিভিতে এক রেকর্ড করা বার্তায় বলেন, ইরান কখনোই ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই আহ্বান জানিয়েছেন।

 মূলত, ২২ জুন ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় তারা। এই তিনটি স্থাপনা হচ্ছে ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান। এই অভিযানে অংশ নেয় ১২৫টি মার্কিন সামরিক বিমান। ১২ দিনের এই যুদ্ধে ৯০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে।