আমাদের একটা ন্যাশনাল আর্মি করা প্রয়োজন: সাবেক সেনাপ্রধান নুরুদ্দীন খান

আমাদের একটা ন্যাশনাল আর্মি করা প্রয়োজন: সাবেক সেনাপ্রধান নুরুদ্দীন খান

সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নুরুদ্দীন খান বলেছেন, ‘আমাদের দেশের নিরাপত্তা নিয়ে একটা কথা, সেটা হলো-১৮কোটি লোকের এই দেশ, গত বিপ্লবে আমাদের যুবকরা পণ করেছে তারা সাহসী।

এই ধরনের ছেলে-মেয়েরা থাকলে দেশের ডিফেন্স কোনো সমস্যা নয়। শুধু আমাদেরকে হিম্মত করে… অর্থের প্রয়োজন। অর্থ ছাড়া সিকিউরিটি হবে না। কাজেই আমাদের একটা ন্যাশনাল আর্মি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

 উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এটা চীন ও সুইজারল্যান্ডে আছে। ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তারা দায়িত্বে থাকেন এবং তারা দেশের সেনাবাহিনীর আন্ডারে ট্রেনিং করেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তারা ত্যাগ স্বীকার করেন।

রোববার রাজধানীর গুলশানে হোটেল রেনেসাঁ’য় ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)-এর উদ্যোগে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

 সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘ন্যাশনাল আর্মি করতে পারলে আমাদের সমাধান হয়ে যাবে। বর্তমানে আর্মিদের দশটি ডিভিশন আছে। এই ডিভিশগুলোকে যদি ১ হাজার করে ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব দিই, তাহলে এক বছরে দশ হাজার ট্রেনিং হয়ে যাবে।

এভাবে আমাদের শক্তি-সামর্থ্য বাড়াতে হবে। তাছাড়া উপায় নেই।’ আরও পড়ুনঃ সব বাদ দিয়ে বিএনপি শুধু নির্বাচন নিয়ে কথা বললে বাংলাদেশ আশাহত হয়: সারজিস তিনি বলেন, ‘এনএসসি বহু দিনের কথা-আমি যখন সেনাপ্রধান ছিলাম, তখন এই বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।

 কিন্তু আমি ফেইল করেছি, পারিনি…।’ নুরুদ্দীন খান বলেন, ‘একটি কথা বলবো এখানে-ন্যাশনাল সিকিউরিটি একজন ব্যক্তির দায়িত্ব নয়, এখানে শিক্ষিত সমাজের টিম থাকতে হবে।

দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকতে হবে..।’ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নুরুদ্দীন খান বলেন, ‘১৯৯১ সালে আমি যখন সেনাপ্রধান ছিলাম, তখন ম্যাডাম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯১-৯৪ পর্যন্ত আমি উনার সঙ্গেই সেনাপ্রধান ছিলাম।

 ম্যাডাম খালেদা জিয়া তথা বিএনপি’র ব্যাপারে আমার খুব ঘনিষ্ঠভাবে জানার সৌভাগ্য হয়েছিল। তাকে আমি দীর্ঘ চার বছর অত্যন্ত নিকট থেকে দেখেছি। উনার যে ধৈর্য, দেশপ্রেম, ন্যাশনালিস্টিক স্পিরিট, স্যাক্রিফাইস, সহনশীলতা-সেটা অতুলনীয়। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে, উনার মতো গার্ডিয়ান (অভিভাবক) বাংলাদেশ পেয়েছে।’

 আরও পড়ুনঃ উত্তরায় হামলার শিকার সেই ‘দম্পতি’ স্বামী-স্ত্রী নন, জানালেন প্রকৃত স্ত্রী বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রতি উনার (খালেদা জিয়া) যে সমস্ত একজাম্পল (উদাহরণ), অর্থাৎ উনি যে সমস্ত অত্যাচার সহ্য করেছেন এবং ধৈর্য প্রকাশ করেছেন-সেই কারণে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে বিএনপি তার কিছু নমুনা আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। বিএনপির কাছে আমার এই অনুরোধ থাকবে।’

নুরুদ্দীন খান বলেন, ‘বিএনপি আজকে বহু সমস্যায় ভুগছে। কেউ কারো কথা শুনছে না। বিএনপির নিজেদেরই ঐক্য নেই। দূর-দূরান্তে ঘটনার পর ঘটনা ঘটছে। সেটা আমরা পেপারে দেখতে পাচ্ছি।

 বিএনপির বড় বড় নেতারা এখানে যারা বসে আছেন, সবাই আমার বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ। তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো-আপনারা দয়া করে দলটাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। ঐক্যবদ্ধ হলে আপনাদের দেখাদেখি বাকি যত দল আছে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে-এটা আমার আশা।’

নব্বইয়ের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, ‘১৯৯১ সালে একটি ইলেকেশন হয়েছিল। সেখানে আমার একটা ক্ষুদ্র অবদান ছিল। তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন জাস্টিস (বিচারপতি) সাহাবুদ্দিন। ম্যাডাম খালেদা জিয়া তখন প্রাইম মিনিস্টার (প্রধানমন্ত্রী) হবেন, তিনি বড় দলের নেত্রী।

 ওই নির্বাচনে সাহাবুদ্দিন সাহেব আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নির্বাচনটা করার। তিনি বলেছিলেন-আমি আশা করি আপনাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে ইলেকশনটা ভালো হবে। এখানে আমি নিজের একটা কৃতিত্ব দিতে চাই। আমি চাই-সেই ধরনের ইলেকশান ভবিষ্যতে হোক।

ওই ধরনের ইলেকশন করতে হলে আর্মির প্রয়োজন। শুধু পুলিশ, আনসার পারবে না। কিন্তু আপনারা জানেন, গত ১৫ বছরে আর্মিতে একটু সমস্যা হয়ে গেছে। এখন যারা নতুন কমান্ডাররা আসছেন, পুরাতন যারা চলে গেছেন; তাদের বলি-নতুন কমান্ডাররা খুবই দেশপ্রেমিক। অর্থাৎ নতুন যারা যারা কমান্ড পেয়েছেন।

আশা করি, তাদের আন্ডারে নির্বাচন সঠিক হবে। নির্বাচন নিয়ে চিন্তা আমার নেই, যদি সেনাবাহিনীকে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়।’