নিজের প্রতারণা ঢাকতে মিথ্যা মামলা ও গুম নাটক সাজিয়েছেন ‘গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক’

নিজের প্রতারণা ঢাকতেই একের পর এক মিথ্যা মামলা ও ‘গুম নাটক’ সাজিয়েছেন বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন। চ্যানেল 24-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য, যেখানে গুম না হয়েও নিজেকে ‘গুমের শিকার’ দাবি করে প্রতারণার শিকার মানুষগুলোকে ফাঁসানোর প্রমাণ মিলেছে।
২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে কল্যাণপুর থেকে তাকে ১০-১৫ জন লোক তুলে নিয়েছিল, এমন দাবি করেন বেল্লাল। বলেন, ৩২ দিন গুম থাকার পর ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তার ভাষায়, ‘স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার সময় হাজারো মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে মানুষকে হত্যা করে। হলি আর্টিজান, জেএমবি, বাংলা ভাইসহ সবই ছিল নাটক।’ আরও পড়ুনঃ রফতানি আয়ও বাড়িয়ে দেখাতো আওয়ামী সরকার, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য! তবে এসব দাবির সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক খুঁজে পায় চ্যানেল DMN express-এর অনুসন্ধানী টিম সার্চলাইট। তদন্তে বেরিয়ে আসে, বেল্লাল মূলত একজন আবাসন ব্যবসায়ী। ‘
লেক্সাস ডেভেলপার্স লিমিটেড’-এর কর্ণধার হিসেবে কুয়াকাটায় জমি বিক্রির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। জমি না পেয়ে প্রতারণার শিকার অসংখ্য গ্রাহক তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। এক ভুক্তভোগী জানান, ‘সিটি হাসপাতালের এমডি ও আরও কয়েকজন পার্টনারকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ভুয়া জমি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন।’
আরও পড়ুনঃ খাবার দেওয়ার কথা বলে ২ শিশুকে ধর্ষণ, তারপর... তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, জমি কেনার এক যুগ পার হলেও কেউই জমি বুঝে পাননি। উল্টো যিনি অভিযোগ করেন, তাকেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসান বেল্লাল। আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় এমপি-মন্ত্রীদের দিয়ে অফিস উদ্বোধন করিয়েছেন, কেক খাওয়ার ছবিও প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পরই ‘গুম পরিবারের সমন্বয়ক’ হয়ে গেলেন।’ বেলাল হোসেন দুইবার অপহরণ মামলা করে হেরে যান। এরপর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আবারও ‘গুমের অভিযোগ’ এনে মামলা করেন, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম জুড়ে দেন।
আরও পড়ুনঃ প্রেম প্রস্তাবে না, রাতের অন্ধকারে জানালা দিয়ে ছুড়া এসিডে দগ্ধ ৩ এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সাবেক জেলা জজ ও আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ‘এই মামলায় কিছুই হবে না, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভুক্তভোগীরা। মামলা টিকবে না, তবে টেকার আগেই যা ঘটবে তা হবে ভয়ঙ্কর।’ জানা গেছে, বেল্লাল হোসেন একই ধরনের আরও তিনটি ‘গুম মামলা’ করেছেন, এর মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এবং একটি গুম কমিশনে।