এক কলেজে দুই অধ্যক্ষ, চেয়ারে বসা নিয়ে টানাহেঁচড়া

নওগাঁর বদলগাছী মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় চেয়ার দখল নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। অধ্যক্ষ চেয়ারে বসে থাকাবস্থায় ওই কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে অধ্যক্ষকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন।
এসময় একটি চেয়ার নিয়ে অধ্যক্ষের পাশে বসে জানান, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৯ জুন বদলগাছী মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীরা খাতা জমা দিচ্ছিলেন, এমন সময় জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের পাশের চেয়ারে বসে পড়েন।
ঠিক তখনই দুই পক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই তা গড়ায় হাতাহাতিতে। এরপর সব শিক্ষক নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে চেয়ারে বসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইমামুল হোসেন কলেজ থেকে বেরিয়ে যান। দুই গ্রুপের অধ্যক্ষের চেয়ার দখল নিয়ে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন এসে ভিড় করেন কলেজ গেটে।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় সমাবেশ যে ৭ দফা দাবি নিয়ে সমাবেশে নামবে জামায়াত ইসলামী বদলগাছী মহিলা কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট বদলগাছী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে মিছিল-মিটিং করেন ওই কলেজের কিছু শিক্ষার্থী।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান অধ্যক্ষের পদ থেকে মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি পরিপন্থিভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় অধ্যক্ষ মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধে আবেদন করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জোরপূর্বক পদত্যাগ বিধিসম্মত নয় বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিধি মোতাবেক ফজলে হুদা বাবুলকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি অনুমোদিত করে। আরও পড়ুনঃ খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতি করার দাবি জানালেন পিনাকী! ওই অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের নিয়ে ৮ মে সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সর্বসম্মতিতে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে ফের পদে বহাল করা হয়।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে বলেন, হাইকোর্টে রিট করলে বর্তমান অ্যাডহক কমিটি স্থগিত করে। যার ফলে আগের সভাপতি লুৎফর রহমান আমাকে অধ্যক্ষ করেন। তাই বদলগাছী মহিলা কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
অপরদিকে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগম ইতোমধ্যে মারা গেছেন। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মাহবুব আলম বলেন, আমাকে তারা কোনো পরিপত্র দেখাতে পারেনি। শুধু হাইকোর্টে রিট করেছে, হাইকোর্ট বর্তমান অ্যাডহক কমিটির ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ জারি করেন এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
রিট শুনানি না হতেই আগের কমিটি কীভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আগের কমিটি পরিবর্তন করে গত ৭ মে ফজলে হুদা বাবুলকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি অনুমোদন দেন এবং ২৬ মে অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করে চিঠি ইস্যু করে। আগের কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রমাণ নেই। আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা, ২৩ বছর পর স্বামীর মৃত্যুদণ্ড কলেজটির একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে কলেজে চেয়ার দখলের লড়াই চলছে।
এতে তাদের শিক্ষা ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো ঝামেলা চলছেই। তারা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চান। অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল বলেন, হাইকোর্টে রিট করেছে, দুই পক্ষের শুনানি হবে। রায় যার পক্ষে যাবে সে ওই চেয়ারে বসবে। তার আগেই চেয়ার দখলের চেষ্টা, এটা সত্যিই দুঃখজনক