সৌদিতে যে কোনো সময় ৫০ প্রবাসীর শিরশ্ছেদ

সৌদিতে যে কোনো সময় ৫০ প্রবাসীর শিরশ্ছেদ

সৌদি আরবে বন্দি থাকা অন্তত ৫০ জন ইথিওপিয়ান ও সোমালিয় নাগরিক যে কোনো সময়ে শিরশ্ছেদের মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও বন্দিদের পরিবার।

 মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই (এমইই)-কে তারা জানায়, নাজরান কারাগারে থাকা এসব বন্দিকে ইতোমধ্যে ‘বিদায় বলার জন্য’ বলা হয়েছে। এই বন্দিরা মাদক পাচারের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের অনেকেই বলছেন, ঈদুল আযহার পর থেকে শিরশ্ছেদ শুরু হয়েছে এবং গত এক মাসে অন্তত ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এমইই-র হাতে থাকা এক তালিকায় ৪৩ জন ইথিওপিয়ান এবং ১৩ জন সোমালির নাম রয়েছে।

 আরও পড়ুনঃ আরব বিশ্ব ও তুরস্কের এটাই শেষ সুযোগ! অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, শুধু জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যেই সৌদি আরবে মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধে ৫২ জনকে শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। অথচ ২০২১ সালে এই ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের একটি অনানুষ্ঠানিক স্থগিতাদেশ ছিল।

 বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সাল থেকে ‘হাশিশ’-এর মতো অপেক্ষাকৃত হালকা মাদকের জন্যও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে, যা পূর্বে বিরল ছিল। ইথিওপিয়ার ওরোমিয়া অঞ্চলের চেলেঙ্কো শহরের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী খালিদ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পরিবার বলছে, তিনি নির্দোষ। ২০১৬ সালে সরকারবিরোধী ওরোমো বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ২০১৮ সালে সৌদিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আটক করা হয়। ২০১৯ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

এখন পর্যন্ত তার ছেলের মুখও তিনি দেখতে পাননি। আরও পড়ুনঃ ভারত কেন ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলো, মোদির উদ্দেশ্য কী! ইউরোপিয়ান সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসের গবেষক দুআ ধাইনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের আইনজীবী ছিল না, তারা অনুবাদ না বুঝেই কাগজে স্বাক্ষর করেছে, এমনকি কখনো কখনো জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।” এদিকে সৌদি আরবে ইথিওপিয়ান দূতাবাস তাদের নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 সোমালিয়া সরকার অবশ্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো বিষয়টি গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে। আরও পড়ুনঃ ইরানে মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়া দেখাল সৌদি-পাকিস্তান এই মাসের শুরুতে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, সৌদির তাবুক কারাগারে ২৬ জন মিশরীয় নাগরিকও শিগগিরই মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন। এ ঘটনায় ৩০টির বেশি মানবাধিকার সংস্থা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি উন্মুক্ত চিঠি দিয়ে দণ্ড বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে।

 সৌদি আরব ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি বদলাতে চাইলেও, মৃত্যুদণ্ডের হার এবং বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। গত বছর সৌদিতে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। যা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।