টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি: রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৩ কর্মকর্তাকে তলব

টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি: রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৩ কর্মকর্তাকে তলব

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে ফ্ল্যাট নেওয়ার মামলার তদন্তে রাজউকের সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ২৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (২৫ জুন) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের আগামী ২৯ ও ৩০ জুন হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

 রাজউকের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সই করা তলবি চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ২৯ জুন যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম, সাবেক সদস্য কামরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক আবু বকর সিদ্দিক, মাহবুবুর রহমান, ওয়ালিউল্লাহ, মো. হাবিবুল্লাহ ও ভুঁইয়া রফিউদ্দিন, সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম, সাবেক উপপরিচালক মো. মাহমুদুল হক, কায়কোবাদ হোসেন ও জাহাঙ্গীর কবির এবং সাবেক সহকারী পরিচালক আবু বকর শেখ।

 ৩০ জুন যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল চৌধুরী, সাবেক সদস্য কর্নেল নুরুল হক ও কামরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সুকেন্দ্র কুমার বিশ্বাস, সাবেক নগর পরিকল্পনাবিদ হাফিজ, পরিচালক মো. আব্দুর রহমান ভুঁইয়া, উপপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান, সাবেক পরিচালক বি কে খান, সাবেক সহকারী পরিচালক আলী আশরাফ, সাবেক উপপরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ, এবং সাবেক সহকারী পরিচালক মনোয়ারুল ইসলাম।

 আরও পড়ুনঃ ছাত্রদলের তথ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সদস্য আটক, শিবির ও বৈছাআর বাধা এর আগে টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিককে ২২ জুন ও ১৪ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গত ২৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও দুদক বরাবর উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। যেখানে তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা ও তার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ এনেছেন।

 ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে এরই মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে সংস্থাটি।

দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ রাজউকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশারফ হোসেন।

 আরও পড়ুনঃ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘এক্সকিউজ’ দেওয়ায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত : হাসনাত আব্দুল্লাহ ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৬৩ সালে তৎকালীন বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরী গুলশানে ১ বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পান। সরকারি ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, ৯৯ বছরের মধ্যে ওই প্লট হস্তান্তর বা ভাগ করে বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। তবে ১৯৭৩ সালে তিনি মো. মজিবুর রহমান ভুঁইয়াকে আমমোক্তার মাধ্যমে প্লটটি হস্তান্তর করেন।

 এরপর প্লটটি ভাগ হয়ে বিক্রি হয় এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ শুরু হয়। জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ শুরু হলে মামলা হয়। মামলার চলমান অবস্থায় এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় রাজউকের সংশ্লিষ্ট আইন উপদেষ্টারা ইস্টার্ন হাউজিংকে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অনুমোদন দেন-যা অবৈধ ছিল। কারণ কোম্পানিটি লিজ হোল্ডার বা বৈধ প্রতিনিধি ছিল না।

 রাজউকের রেকর্ড অনুযায়ী, ৯৯ বছরের ইজারার শর্তে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে প্লট হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। তবুও ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার করে ওই প্লট ভাগ করে ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়। এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ‘অবৈধভাবে’ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ’অবৈধ পারিতোষিক’ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ’বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন।

এজাহারে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার অনুমোদনপূর্বক ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের অনুমোদন করিয়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে ও নিজে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দাবি করা হয়। আরও পড়ুনঃ এবার তরুণ যুবকদের উদ্দেশ্যে একি বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা: ড. ইউনুস এর আগে পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির এক মামলায় টিউলিপকে আসামি করেছে দুদক।

 ওই মামলায় সহযোগী আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে আদালত। গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। যা আমলে নিয়েই মূলত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ছয়টি মামলার মধ্যে একমাত্র টিউলিপই প্লট না নিয়েও আসামি হয়েছেন।