সংঘাতের আশঙ্কায় দিন কাটছে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের কাশ্মীরিদের

সংঘাতের আশঙ্কায় দিন কাটছে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের কাশ্মীরিদের

ভারতশাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের জীবনে আবারও নেমে এসেছে অনিশ্চয়তার ছায়া। যুদ্ধের আশঙ্কায় সীমান্তের দুই পাশেই মানুষের মাঝেই চলছে প্রস্তুতি।

কেউ বাঙ্কার বানাচ্ছে, কেউবা শিশুদের যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করছে। দুই দেশের ভেতরে সংঘাতের আশঙ্কায় গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মাঝে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণ রেখার (LoC) খুব কাছাকাছি অবস্থিত চুরান্দা গ্রাম। এখানে একসঙ্গে পাকিস্তানি ও ভারতীয় সেনাদের উপস্থিতি দেখা যায়। দুই দেশের মধ্যে শুধুমাত্র সীমান্তে গুলি বিনিময়ের ফলে চুরান্দা গ্রামেই গত কয়েক দশকে ১৮ জন নিহত হয়েছেন।

 চুরান্দা গ্রামের শিক্ষক ফারুক আহমেদ জানান, পর্যটকদের উপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও ভয়ের হয়ে উঠেছে। ২৫ বছর বয়সী আব্দুল আজিজ বলেন, এই গ্রামের জনসংখ্যা মাত্র ১,৫০০ জন। আর এখানে রয়েছে মাত্র ছয়টি বাঙ্কার। যদি আবার যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাবো? সীমান্তের উত্তেজনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকাটিই।

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ রেখার অপর পাশে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের চাকোথি গ্রামে মানুষ নিজের ঘরের পাশেই বাঙ্কার তৈরি করছেন। কেউ কেউ পাহাড়ের ধারে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়েছে। ২২ বছর বয়সী ফয়জান আনায়াত বলেন, যখনই গুলির শব্দ শোনা যায়, মানুষ সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্কারে চলে যায়। ৭৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাজির জানান, তিনি তার বাঙ্কার সংস্কার করেছেন । তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সবাই যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যুদ্ধকালীন সময়ের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসনও।

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের প্রশাসন ১ বিলিয়ন রুপি জরুরি তহবিল প্রস্তুত করেছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে দুই মাসের জন্য খাদ্য,পানি ও ওষুধ সরবরাহ পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তান কাশ্মীরের কর্তৃপক্ষ সব মাদ্রাসা ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।

এছাড়া রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আগে থেকেই সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে এবং উদ্ধারকারী দল ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কাশ্মীরে পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্টের প্রধান গুলজার ফাতিমা জানিয়েছেন, ভারত সামরিক অভিযান শুরু করলে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থানান্তর ঘটবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। তারা ৫০০ পরিবারের জন্য ত্রাণ শিবির প্রস্তুত করেছেন। তাঁবু, রান্নার সামগ্রী এবং স্বাস্থ্যসামগ্রীও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।