রিকশাচালককে জুতাপেটা করা সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা বরখাস্ত

একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করার কথা, তিনি কি না প্রকাশ্য দিবালোকে এক অটোচালককে মারধর করছেন! ঘটনাটি শুধু রাজশাহীর পবা উপজেলায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।
সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন নিদর্শন নিয়ে এখন সরব সাধারণ মানুষ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, দুপুরে রাজশাহীর পবা উপজেলায় ঘটে যায় এক অমানবিক ঘটনা। এক অটো-রিকশাচালক তার রিকশা যোগে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেন। ভাড়া কম বেশি নিয়ে রিকশাচালক কথা বলতেই পায়ের জুতা খুলে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালককে জুতাপেটা করতে থাকেন।
সেই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান। তিনি রেগে গিয়ে রিকশাচালককে বেধড়ক মারধর করতেই থাকেন। এক পর্যায়ে তাঁর প্রাইভেট কার থেকে লাঠি নিয়েও মারধর করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তুচ্ছ এক বিষয়ে প্রথমে বাকবিতণ্ডা হয়, তারপর রাগের বশে তিনি চালককে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারতে থাকেন। আশেপাশের লোকজন সেই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
মুহূর্তের মধ্যেই ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেয়। দেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর, মন্ত্রণালয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর আওতায় জাহিদ হাসানকে সোমবার (০৩ মার্চ) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সরকারি কর্মচারী হিসেবে জনগণের প্রতি তার দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত ছিল, কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সমাজসেবা বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যদি প্রকাশ্যে এমন আচরণ করেন, তাহলে সাধারণ মানুষের প্রতি তার আচরণ কেমন হতে পারে এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মারধরের শিকার ওই অটোচালকের নাম জানা না গেলেও, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি দরিদ্র এবং প্রতিদিনের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল।
তার গায়ে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল, এবং তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, "অফিসার মানুষ হয়েও তিনি এমন ব্যবহার করলেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। গরিব মানুষকে কেউ মানুষ মনে করে না।" এই ঘটনা শুধু একজন কর্মকর্তার বরখাস্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
এটি বড় একটি প্রশ্ন তুলেছে—সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি? বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা কি পরে আবার স্বপদে বহাল হয়ে যান না? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় শুধু সাময়িক বরখাস্ত যথেষ্ট নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এমন আচরণ করতে সাহস না পায়। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের টাকায় বেতন পান, তাই জনগণের সেবক হিসেবেই তাদের কাজ করা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটে।
তবে এই ঘটনায় দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রশংসনীয়, যা ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ভূমিকা রাখতে পারে। এখন দেখার বিষয়, তদন্তের পর জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে কী ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ চায়, যেন ন্যায়বিচার হয় এবং কেউ যেন নিজের ক্ষমতাকে গরিবের প্রতি অন্যায় করার জন্য ব্যবহার করতে না পারে।