ট্রাম্প-মোদির বৈঠকের সব ইস্যুকে ছাড়িয়ে গেল যে বিষয়টি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ভারতীয় গণমাধ্যম তো বটেই বিশ্ব গণমাধ্যমও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার এই বৈঠক নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রচার করছে। দুই দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের মধ্যে এই বৈঠক নিয়মিত কূটনৈতিক যোগাযোগ হলেও ভারত সরকারও এ নিয়ে ‘লোক-দেখানো’ প্রচারে নেমেছে। তবে ট্রাম্প ও মোদির আসন্ন এই বৈঠকের সব ইস্যুকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল বেঁধে ‘অপমানজনক ও অমানবিকভাবে’ ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি। প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়েও। মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিশেষ মিডিয়া ব্রিফিং করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি জানান, আগামী বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন মোদি।
সেখানে দুদিন অবস্থান করবেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের পদে বসার পর ট্রাম্পের সঙ্গে এই প্রথম বৈঠক করতে চলেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হবে তাদের। তবে বিশেষ এই মিডিয়া ব্রিফিংয়েও ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে একগাদা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে বিক্রম মিশ্রিকে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০৪ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীকে সামরিক উড়োজাহাজে করে ভারতে ফেরত পাঠায় ট্রাম্প প্রশাসন। এই সময় তাদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল বাঁধা ছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে যে চূড়ান্ত অপসারণ আদেশ রয়েছে এমন আরও প্রায় ৪৮৭ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী রয়েছে। তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হতে পারে। তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করবে সরকার। মোদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫ হাজারের বেশি অবৈধ ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে রেকর্ড সংখ্যক অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়। বিক্রম মিশ্রি বলেন, সবশেষ ভারতীয়দের বিতাড়িত করার সময় সামরিক বিমান ব্যবহার করা হয়েছে।
কারণ মার্কিন কর্তৃপক্ষ মনে করেছে যে এটি সবচেয়ে দ্রুততম বিকল্প উপায় হবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মার্কিন ব্যবস্থায় এটিকে জাতীয় নিরাপত্তা অপারেশন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সম্ভবত এটিই সামরিক বিমান ব্যবহারের একটি কারণ। ভারতও এই পরিবহন ব্যবস্থার বিষয়ে রাজি হয়েছে। তবে যদি সম্ভব হয় তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করা হবে। চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার ভারত। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী নয়াদিল্লি। পাশাপাশি নিজেদের দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষ কর্মী ভিসা পাওয়া সহজ করতে চায় ভারত। তাছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন মোদি। এতকিছুর পরও ভারতের উচ্চ শুল্কনীতি ও অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সূত্র রয়টার্স,সিএনএন, দ্য হিন্দু ও আলজাজিরা।