জে কারণে এত আগে নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করছে জামায়াত?

জে কারণে এত আগে নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করছে জামায়াত?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে চলতি বছরের শেষ দিকে এই নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই নির্বাচনে অংশ নিতে এখন থেকেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

একই সঙ্গে তারা নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারও চান। সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জেলায় জেলায় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এরই মধ্যে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সফর করছেন। আর জনসভার মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীদের পরিচয়ও করিয়ে দিচ্ছেন। জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আসনভিত্তিক প্রার্থী দিচ্ছেন তারা।

এর মাধ্যমে নির্বাচনের আগে তাদের প্রার্থীদের সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত মুখ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১৬ বছর নির্বাচন থেকে দূরে থাকা এবং আওয়ামী লীগের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে ভোটকেন্দ্রিক দৌড়ঝাঁপ হয়নি। ঘোষিত প্রার্থীরা জনগণের মধ্যে তাদের জনসেবা ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে পারেন। এছাড়া প্রার্থীর নেতৃত্বে দলীয় অবস্থান সুসংহত করা এবং জনগণের আরও কাছে পৌঁছানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করছে। ‘জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। এরই মধ্যে আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন অভ্যন্তরীণভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে।’-

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন বিভাগের সদস্য মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও জামায়াত দেশের শতাধিক আসনে শক্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। সেই কারণে দুটি ক্যাটাগরিও করেছে তারা। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৫০টি ও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৫০টি আসন থাকবে। ভোটের আগে জোটবদ্ধ হলে এই হিসাবের পরিবর্তন হতে পারে।

ইসলামি দলগুলোকে কাছে পেতে ছুটছেন তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের এক শুরা সদস্য জাগো নিউজকে জানান, আগামী নির্বাচনে তরুণদের বেশি সুযোগ দিচ্ছে জামায়াত। জ্যেষ্ঠ নেতারা উপদেষ্টার ভূমিকায় কাজ করছেন। এতে নতুনদের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির চেষ্টা হচ্ছে। জোটে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু আসন ছাড়তে হলেও স্থানীয় পর্যায়ে যাতে সেসব নেতা নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারেন সে চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি জামায়াতের একটি দূরদর্শী চিন্তা বলেই মনে করেন ওই শুরা সদস্য। জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন বিভাগের সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত জাগো নিউজকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল।

এরই মধ্যে আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন অভ্যন্তরীণভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে। নির্বাচন কাছাকাছি এলে এবং তফসিল ঘোষণার পরে বোঝা যাবে জামায়াত জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে নাকি কিছু আসনে কাউকে ছাড় দিয়ে নির্বাচন করবে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে।’ নির্বাচন কখন চাচ্ছে জামায়াত এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াছিন আরাফাত বলেন, দেশের শহীদ পরিবার ও জনগণের চাওয়া হচ্ছে সংস্কার করার মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন করা। আমরা কিছু দলের কাছে শুনি সংস্কার করতে গেলে নির্বাচনে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চাই, যে জুলুমবাজ সরকার দেশে ক্ষমতায় ছিল, তাদের মতো করে যেন আর কোনো সরকার ক্ষমতায় জুলুম করে না থাকতে পারে। সেজন্য সংস্কার করার পরে নির্বাচন হোক। ‘মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।

এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।’ -জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জামায়াত এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা প্রাথমিক সিলেকশন বলে মন্তব্য করেন তিনি। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি। ইসলামি দলগুলোকে কাছে পেতে ছুটছেন তারা এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট বিভাগের সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদের নিয়ে আয়োজিত অনলাইন বৈঠকে ১৯টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সিলেট অঞ্চলের পরিচালক অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। এ প্রসঙ্গে রোববার জামায়াত আমির বলেন, ‘ইলেকশন এখনো অনেক দূর।

ইলেকশন কাছে এলে দল ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে। এখন যেটা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা প্রাথমিক সিলেকশন। তখন যাদের নমিনেশন দেওয়া হবে, তারাই প্রার্থী হবেন।’ সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে নাম ঘোষণা বিজ্ঞাপন নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।’ বিএনপির জন্য এই প্রার্থিতা ঘোষণা চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা নয়। কারণ প্রতিটি আসনে বিএনপির ১০ জনের বেশি প্রার্থী দেওয়ার মতো লোক আছে। বিএনপি তাদের মধ্যে যোগ্য কাকে প্রার্থী করবে এটিই বড় চ্যালেঞ্জ। -ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান নির্বাচন ঘিরে যে কোনো দলই প্রস্তুতি নিতে পারে জামায়াতের নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে যে কোনো রাজনৈতিক দলই প্রস্তুতি নিতে পারে। তা কখন নেবে সেটি তাদের বিষয়। সামনে নির্বাচন হতেই হবে। সে ক্ষেত্রে যেসব দল আগে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিত না, তারা বর্তমানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আগাম শক্তির জানান দিচ্ছে।

এটি জামায়াতের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপির ওপর চাপ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির জন্য এই প্রার্থিতা ঘোষণা চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা নয়। কারণ প্রতিটি আসনে বিএনপির ১০ জনের বেশি প্রার্থী দেওয়ার মতো লোক আছে। বিএনপি তাদের মধ্যে যোগ্য কাকে প্রার্থী করবে এটিই বড় চ্যালেঞ্জ। জামায়াত যেখানে নির্বাচিত হয়েছে এক টাকাও দুর্নীতি হয়নি শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে নির্বাচনের দিকে এগোতে চায় জামায়াত কাউকে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া হবে না: জামায়াত আমির জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি ও জামায়াত আলাদা জোট করলে তারা প্রধান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যা দেশের রাজনীতির জন্য ভালো। ঢাকার দুই মহানগরের জামায়াত নেতাদের তথ্যে জানা গেছে, ঢাকার আসনগুলোর জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তা জানানো হবে।