চাঁদাবাজির মামলায় গাজীপুরের সাবেক বিএনপি নেতা স্বপন গ্রেফতার

গাজীপুরের টঙ্গীতে চাঁদাবাজি মামলায় গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান স্বপনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য পদেও রয়েছেন। পুলিশ জানায়, রোববার দুপুরে টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় অবস্থান করছিলেন জিয়াউল হাসান স্বপন। তার অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, জিয়াউল হাসান স্বপন পেশায় একজন আইনজীবী।
তিনি সাবেক বিএনপি নেতা পরিচয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলায় আসামি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন। স্বপনের বিরুদ্ধে ঢাকার বাড্ডা থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দায়ের করা হত্যার চেষ্টা মামলায় (৩৩৬ নং) আসামি হিসেবে তার নাম রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ প্রথমে ইউনিয়ন রুম, পরে স্টাফ রুমে নিয়ে ধর্ষণ— অভিযোগপত্রে যা লিখলেন ছাত্রী মামলা বাণিজ্যে বেপরোয়া গাজীপুরের বিএনপি নেতা স্বপন টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের ওসি মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে থানায় চারটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরে সোমবার আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।
এদিকে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাসিনার পতনের পর ভোল পালটে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দলীয় পদ না থাকলেও সাবেক নেতার পরিচয় দিয়েই প্রকাশ্যে চালিয়ে যান চাঁদাবাজি।
এলাকার ব্যবসায়ী শ্রেণী, শিক্ষক, বাড়িওয়ালাদের টার্গেট করে ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন। চাহিদা মাফিক চাঁদা না পেলেই টার্গেট ব্যক্তিকে করেন মামলার আসামি। তার মামলা বাণিজ্য এখন টঙ্গী-গাজীপুরের মানুষের কাছে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। দলীয় নেতারাও স্বপনের ওপর বিরক্ত; তার কারণে দলের ইমেজ চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুনঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সদস্য সচিবের পদত্যাগ স্থানীয় ও দলীয় সূত্র বলেছে, জিয়াউল হাসান স্বপন এককালে টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। এখনো নিজের নামের সঙ্গে জিএস শব্দ জুড়ে চলছেন তিনি।
বর্তমানে কোনো দলীয় পদে নেই। তিনি টঙ্গীর লেদুমোল্লা রোড এলাকার কফিল উদ্দিন দেওয়ানের ছেলে। পেশায় আইনজীবী। আইন পেশার সুবাদে বাদীদের জিম্মি করে মামলা বাণিজ্য করেন। দলীয় পদে না থাকলেও তিনি এলাকায় আধিপত্য দেখান বিএনপির পরিচয়েই।
জিয়াউল হক স্বপনের চাঁদা দাবি, মামলা বাণিজ্য ও হুমকি-ধমকির ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় দুটি মামলা ও একাধিক লিখিত অভিযোগ রয়েছে। আরও পড়ুনঃ পরিচয় মিলল রাস্তায় পড়ে থাকা সেই কার্টনভর্তি খণ্ডিত লাশের ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে দেশের পটপরিবর্তনের পর বিএনপি নামধারী স্বপন এলাকার লোকজনের নামে ‘টার্গেট মামলা’কে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
মোটা অংকের চাঁদা, দামি মোবাইল ফোন, ব্যবসায় অংশীদার করে নেওয়ার দাবি করে হুমকি দিচ্ছেন। টার্গেট ব্যক্তি চাঁদা না দিলে হুমকি, ধমকি এমনকি অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করছেন।
স্বপনের এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দলীয় নেতাকমীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। টঙ্গীর বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।