সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী অসহায় বাবা, ভেসে যেতে দেখেন ২ সন্তানসহ ১৭ জনকে

পাকিস্তানের সোয়াত নদীতে ভয়াবহ ট্রাজেডিতে নিজের দুই সন্তানকে হারিয়েছেন মারদান এলাকার বাসিন্দা নাসির আহমেদ। গত সপ্তাহে পিকনিকে গিয়ে হঠাৎ নদীর পানির স্রোত বেড়ে গেলে মারদান ও শিয়ালকোটের দুটি পরিবারের ১৭ জন সদস্য ভেসে যায়।
এই ঘটনায় কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে নাসির আহমেদের ১২ বছর বয়সী ছেলে দানিয়াল এবং ৬ বছর বয়সী মেয়ে ইশালও রয়েছে। সহায়তা চেয়ে বারবার ফোন, কিন্তু কেউ এলো না। সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নাসির আহমেদ বলেন, ‘আমি সকাল ১০টা ৩ মিনিটে ১১২২-এ ফোন করি। তখন তারা জানায়, এক ঘণ্টা আগেই একটি রেসকিউ গাড়ি পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু ঘটনাস্থলে কেউ ছিল না।’ আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে গিয়ে ফুটপাতে চাঁদাবাজি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি দৌড়ে নদীর দিকে যাই, দেখি আমার সন্তানরা দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ তুলে তাকাতেও পারছিলাম না, ওদের ওই অবস্থায় দেখে।’ তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে একটি রেসকিউ গাড়ি আসে, কিন্তু তাদের সঙ্গে ছিল মাত্র একটি দড়ি। ‘
আমি জিজ্ঞেস করি—এখন কী করব? তারা বলে, আর কিছু নেই আমাদের কাছে। এরপর শুধু দড়িটা রেখে চলে যায়।’ নাসির আহমেদ বারবার সাহায্য চাইতে থাকেন, ১১২২-এ বহুবার ফোন করেন, কিন্তু আর কোনো জবাব মেলেনি। পরে আরও একটি বড় গাড়ি আসে, কিন্তু সেটিতেও ছিল না কোনো নৌকা বা লাইফ জ্যাকেটের মতো জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম।
আরও পড়ুনঃ ইরানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ আক্রমণ কল্পনার বাইরে যে পরিণতি ভোগ করছে ইসরাইল তিনি বলেন, “আমি ওদের জিজ্ঞেস করি—তোমরা এখানে এসেছ কেন? এখন তাহলে আমার সঙ্গে বসে কাঁদো, যেমন আমি ও অন্যরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম।’ চোখের সামনে সন্তানদের ভেসে যেতে দেখেন: নাসির বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদেরকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পানির মধ্যে আটকে থাকতে দেখি, কিছুই করতে পারিনি।
’ পাশে আরেকটি পরিবার—শিয়ালকোট থেকে আসা—তাদের সদস্যরাও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কিন্তু কেউ আসেনি।’ তিনি বর্ণনা করেন, কীভাবে শিয়ালকোটের পরিবারের ১০ জন সদস্য একে একে পানিতে ডুবে যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ২৭ জুন, যখন মারদান ও শিয়ালকোটের দুটি পরিবার সোয়াত নদীর তীরে পিকনিকে গিয়েছিল।
হঠাৎ পানির প্রবল ঢেউয়ে তারা আটকা পড়ে। আরও পড়ুনঃ ভোরে বাবা-মাকে খুন, সন্ধ্যায় মসজিদে ঢুকে হামলা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা নদীর মাঝখানে একটি ক্রমাগত ছোট হতে থাকা ভূখণ্ডে আটকে পড়ে সাহায্যের জন্য আকুতি জানাচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছায়নি।
এখন পর্যন্ত ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, চার জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে এবং এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। এই ঘটনাটি শুধু এক অসহায় বাবার নয়, বরং গোটা সমাজের দায়িত্বহীনতা, অব্যবস্থাপনা এবং বিলম্বিত সাড়া দেয়ার চিত্র তুলে ধরে।