ইসরায়েলে পাল্টা আক্রমণে গর্বিত ৭৭ শতাংশ ইরানি

ইসরায়েলে পাল্টা আক্রমণে গর্বিত ৭৭ শতাংশ ইরানি

ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের এই সক্ষমতাকে ‘গর্বের প্রতীক’ হিসেবে দেখছেন দেশটির অধিকাংশ নাগরিক। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি’র গবেষণা বিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে, এই পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ৭৭ শতাংশ ইরানি গর্ব অনুভব করেছেন।

ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা প্রেস টিভি এই জরিপ প্রকাশ করেছে। জুন ২০২৫-এর শেষভাগে তেহরানসহ ৩৩টি শহরে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৪ হাজার ৯৪৩ জন নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে পরিচালিত এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।

 জরিপ অনুসারে, ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে পরিচালিত ওই হামলার ব্যাপারে ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ নাগরিক ইরানি সামরিক বাহিনীর পারফরম্যান্সকে ‘সম্পূর্ণ শক্তিশালী’ বা ‘অনেকটা শক্তিশালী’ বলে অভিহিত করেছেন। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও মানুষের আস্থা প্রকাশ পেয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ এই প্রতিরক্ষা ইউনিটের কার্যকারিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, ইসরায়েলের ছোড়া অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। আরও পড়ুনঃ যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সফরে ট্রাম্পের দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানি বাহিনী বেশ কয়েকটি হার্মেস গোয়েন্দা ড্রোন এবং অন্তত দুইটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।

 জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪২ দশমিক ১ শতাংশ ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় প্রচণ্ড রাগ ও ঘৃণার অনুভূতির কথা জানান, আর ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন, পাল্টা জবাবে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়েছে। ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ নাগরিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আরও বিস্তারের পক্ষে মত দিয়েছেন, যা প্রতিরক্ষার জন্য অপরিহার্য বলে তারা মনে করেন।

আরও পড়ুনঃ পবিত্র আল আকসা প্রাঙ্গণে উপাসনা করছে ইহুদিরা! জরিপ অনুযায়ী, ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন এই ১২ দিনের সংঘাত ভবিষ্যতের আগ্রাসন প্রতিরোধে ইরানের সামরিক সক্ষমতা আরও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ করেছে। একইসঙ্গে ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ বলেছেন, এই যুদ্ধ জাতীয় ঐক্য ও সংহতিকে ‘অত্যন্ত বেশি’ বা ‘অনেকটা’ বৃদ্ধি করেছে।

তবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আশাবাদী নন অধিকাংশ ইরানি। মাত্র ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ ইসরায়েলের ঘোষিত একতরফা যুদ্ধবিরতিকে ‘সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য’ বলে মনে করেন। বিপরীতে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলেন, তারা একেবারেই আশাবাদী নন যে ইসরায়েল এ চুক্তি মেনে চলবে। পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও শক্ত অবস্থান নিয়েছে ইরানি জনগণ।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৮ শতাংশ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে বিরোধিতা করেন, আর ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতায় কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনৈতিক আলোচনার সুযোগ দিচ্ছে ইরান: ইসমায়েল বাকাই ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ বলেছেন, তারা ‘খুবই’ বা ‘অনেকটা’ অংশ নিতে প্রস্তুত।

 মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করেন, হামলাগুলো ‘খুব কম’ বা ‘কম’ সফল হয়েছে। ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন, তা একেবারেই ব্যর্থ ছিল। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রাম সম্পর্কে ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেন, এগুলো ইসরায়েলি গোয়েন্দাগিরির সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 সার্বিকভাবে জরিপটি ইঙ্গিত দেয়, ইরানের জনগণ কেবলমাত্র সামরিক প্রতিক্রিয়ার দিক দিয়েই নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং আত্মপরিচয়ের প্রশ্নেও ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।