মা-ছেলেমেয়েসহ তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

মা-ছেলেমেয়েসহ তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ী গ্রামে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে মা, ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন এই গ্রামে হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে।

 নিহতরা হলেন—জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৮), তাঁর ছেলে মো. রাসেল (৩৫) এবং মেয়ে জোনাকি আক্তার (৩২)। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৫)। তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কীভাবে শুরু হয় ঘটনা মঙ্গলবার স্থানীয় শিক্ষক রুহুল আমিনের একটি মোবাইল চুরি হওয়ার পর সন্দেহের তীর যায় রুবির মেয়ের জামাই মনির হোসেনের দিকে। পরদিন সকালে ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও মেম্বার বাচ্চু মিয়া রুবিদের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

 কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে রুবি মেম্বার বাচ্চুকে চড় মারেন। এরপরই শুরু হয় উত্তেজনা। আরও পড়ুনঃ আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিই, ‘রক্ত মাড়িয়ে সংলাপ নয়’: হাসনাত আবদুল্লাহ স্থানীয়রা জানান, মসজিদের মাইকে চেয়ারম্যান-মেম্বারের ওপর হামলার খবর প্রচার করা হয়। এতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে এসে রুবিদের বাড়িতে হামলা চালায়।

তারা তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করে, বাড়িতে ভাঙচুর করে এবং মরদেহ বাড়ির সামনেই ফেলে রাখে। পুলিশের অবস্থান বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ আহত রুমা আক্তারসহ অন্যদের উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতদের পরিবার মামলা না করায় পুলিশ নিজ উদ্যোগে মামলা দায়েরের চিন্তাভাবনা করছে। আরও পড়ুনঃ তরুণীকে হাত-পা বেঁধে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, যা জানা গেল পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, “নিহতরা অপরাধী হলেও তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া যেত।

 কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে যারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।” এদিকে, ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “গণপিটুনি এক ধরনের গুরুতর অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যারা এতে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।”

 আরও পড়ুনঃ কারামুক্ত হওয়ার পর নুসরাত ফারিয়ার ফেসবুক পোস্ট আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গণপিটুনিতে ৯৪ জন নিহত হয়েছেন। আসক দ্রুত এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছে। তদন্ত ও বিচার পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় অংশ নেওয়া কয়েক গ্রামের লোকদের শনাক্তে তদন্ত চলছে।

গণপিটুনিতে জড়িতদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনাটি দেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকারের প্রশ্নে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।