সম্পত্তি ছেলেদের দখলে, বাবা-মায়ের ঠাঁই এখন টয়লেটের পাশে বিদ্যুৎবিহীন ঘরে

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দুই ছেলের প্রতারণা, নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। ছেলেরা নানা কৌশলে পৈত্রিক সম্পত্তি লিখে নিয়েছে।
এখন টয়লেট পাশে নির্মিত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছোট্ট একটি ঘরে তাদের ঠাঁই হয়েছে। যেখানে ঠিকমতো চলাচলের পথটুকুও নেই তাদের। সব মিলিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবা সানোয়ার হোসেন (৬৫) ও মা মতিজান নেছা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজিব সরকার রাজু তাদের এই দুর্দশার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। রাজিব সরকার রাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়িতে গত ছয় বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তীব্র গরমে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ঘরে থাকতে পারেন না।
ঘরের একদম সামনে ছোট ছেলে মানিক হোসেন বাথরুম বানিয়েছে, সেই দুর্গন্ধে ঘরে অবস্থান করাও কষ্টকর। এছাড়া চলাচলের পথও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। আরও পড়ুনঃ নতুন সংবিধান ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম তিনি আরও বলেন, এই অবস্থার কথা জানতে পেরে মাস খানেক আগে গ্রামের ২০-২৫ জন লোক ওই দুই ছেলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিল।
কিন্তু তারা সবাইকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর গ্রামবাসী এসে আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি পাঁচ দিন পর নিজে ওই বাড়িতে যাই। ছেলেরা তখন বাড়িতে ছিল না, আমি দুই ছেলের বউকে ডেকে বলি – ওরা বাড়ি এলে যেন আমাকে জানায়। আমি বসে কথা বলতে চাই। কিন্তু তারা তিন-চার দিনেও যোগাযোগ করেনি। ‘
পরে আমি বড় ছেলে মোক্তার হোসেনকে ফোন করি। বলি, আমি তোদের বাড়িতে গেছিলাম, তোদের সঙ্গে বসতে চাই। তখন সে বলে, আপনি যদি আমার বাবা-মা সম্পর্কে কথা বলেন, তাহলে আমি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। যদি কোনো ক্ষমতা আপনাদের থাকে, সেই ক্ষমতা প্রয়োগ কইরেন।
যা পারেন কইরেন। আমার ফোন লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিল, প্রায় ২৫ জন লোকের সামনে বলেছে, সবাই শুনেছে। আরও পড়ুনঃ পালানোর জন্য শেখ হাসিনার লজ্জায় ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়া উচিত: দুদু এরপর প্রায় ১৫-২০ দিন তিনি আর কোনো খোঁজ নেননি। তবে ইউপি সদস্য রাজুর ধারণা, ওই দুই ছেলে প্রায় ৭-৮ বছর আগে বয়স্ক ভাতা করে দেওয়ার প্রলোভনে তাদের বাবা-মাকে ফাঁদে ফেলে পাঁচ বিঘা জমি নিজেদের নামে লিখে নেয়। সেই সময় বাবা সানোয়ার হোসেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ছয় বছর আগে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তিনি জানতে পারেন, তার নামে আর কোনো সম্পত্তি নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড় ছেলে মোক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে খুব বিপদে আছি। মামাদের সঙ্গে মেম্বারের কাছে গেছিলাম। আজ বসে সমাধান করব। আরও পড়ুনঃ সচিবালয় অভিমুখে ইশরাক সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা এর আগে গত ২ জুলাই বাবা সানোয়ার হোসেন তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তার দুই ছেলে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পত্তি লিখে নিয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। বসতঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এতে তিনি ও তার স্ত্রী শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বৃদ্ধ দম্পতিকে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা নিয়েও আমরা ভাবছি।