আনার হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড়, জড়িত মার্কিন নারী কে?

ভারতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকজনের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিল দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও কয়েকজন নজরদারি ও তদন্তের মুখে রয়েছেন। এ হত্যা মামলায় সর্বশেষ দেশের বাইরে নেপাল থেকে আটক হয়েছেন অন্যতম আসামি সিয়াম। এরপরই নতুন দিকে মোড় নিয়েছে হাই-প্রোফাইল এ হত্যাকাণ্ড। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম বর্তমানে কলকাতা সিআইডির হেফাজতে রয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মামলা সংক্রান্ত বেশকিছু বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কলকাতায় নিউটাউনের সেই ফ্ল্যাটটিতে যাওয়ার পরপরই এমপি আনারকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া, এ হত্যাকাণ্ডে নেপালে গ্রেপ্তার হওয়া মোহাম্মদ সিয়াম জিজ্ঞাসাবাদে একজন নারীর কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন— আনারকে হত্যার সময় ওই নারী অন্যদের সাহায্য করেছিলেন। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ওই নারী মার্কিন নাগরিক এবং মামলার প্রধান আসামি আখতারুজ্জামানের বান্ধবি। ওই সিআইডি কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, আনারকে হত্যার পরে তার দেহ কয়েকটি ছোট টুকরো করে প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখে আসামিরা। পালিয়ে যাওয়ার আগে তারা বাগজোলায় খালের বিভিন্ন অংশে টুকরোগুলো ফেলে দেয়। তিনি আরও দাবি করেছেন, আনারের শরীরের কিছু অংশ একটি ট্রলি-স্যুটকেসে করে সেগুলো বনগাঁ সীমান্তের কাছে কোথাও ফেলা হয়। সেসব দেহাংশের সন্ধানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলে জানান তিনি। বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি। চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আনার তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন। গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই।
একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও। ১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার (আনার) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিন ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে। পরে ২২ মে ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসা থেকে এমপি আনার যাত্রা শুরু করায় ডিবি পুলিশের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি।