হানিমুনে গিয়ে স্বামীকে হত্যা, নববধূর স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এল তৃতীয়জনের ছক

হানিমুনে গিয়ে স্বামীকে হত্যা, নববধূর স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এল তৃতীয়জনের ছক

ভারতের মেঘালয়ের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে হানিমুন করতে গিয়ে নিহত হন ইন্দোরের এক যুবক। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের দাবি, স্ত্রী সোনমই স্বামী রাজা রঘুবংশী হত্যায় প্রধান সন্দেহভাজন এবং তার প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা ছিলেন এই ঠাণ্ডা মাথার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজ কুশওয়াহা হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং তিনজন ভাড়াটে ব্যক্তি- বিকাশ সিং চৌহান, আকাশ রাজপুত ও আনন্দ কুর্মি-এর মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। পাঁচজনকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর সোনম রঘুবংশী এক হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরের উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে পালিয়ে যান। রোববার (৮ জুন) রাতে আতঙ্কিত অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে, পুলিশ তৎক্ষণাৎ তাকে আটক করে।

এই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে এবং পুলিশ সূত্র বলছে, আরও তথ্য সামনে আসতে পারে। মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমা করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সেই নববধূ সোনমের খোঁজ মিলে রোববার। তবে, নিখোঁজ নন, তিনিই ছিলেন বর রাজা রঘুবংশী হত্যার মূল হোতা। জানা গেছে, এত দিন আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সোমবার (৯ জুন) পুলিশের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এর আগে শনিবার (৭ জুন) রাতে উত্তর প্রদেশের গাজিপুরে একটি ধাবায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় সোনমকে। পরে তাকে উদ্ধার করে গাজিপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানেই পুলিশের কাছে ওই নারী আত্মসমর্পণ করলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শুধু সোনম নন, এ ঘটনায় জড়িত আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেঘালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিজিপি) ইদাশিশা নংরাঙ জানান, রাতভর অভিযান চালিয়ে একজনকে উত্তর প্রদেশ এবং বাকি দুজনকে ইন্দোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজাকে হত্যার জন্য সোনম তাদের ভাড়া করেছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আরও একজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২৩ মে। মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের চেরাপুঞ্জিতে মধুচন্দ্রিমায় যান সদ্য বিবাহিত রাজা রঘুবংশী ও সোনম। ২২ মে নংগ্রিয়ায় পৌঁছে ‘বালাজি হোমস্টে’ নামে একটি হোটেলে ওঠেন তারা। পরদিন সকালে সেখান থেকে চেকআউট করেন ওই নবদম্পতি। এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ মেলেনি। যে স্কুটার তারা ভাড়া করেছিলেন, তা পরদিন সোহারিম এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়। নিখোঁজের ১০ দিন পর গত ২ জুন রিয়াত আর্লিয়াং অঞ্চলে ‘ওয়েইসাওডং পার্কিং লট’-এর নিচে একটি গভীর গিরিখাদে মেলে রাজার মৃতদেহ।

নিথর দেহের পাশ থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হয়, এটি দিয়েই হত্যা করা হয়েছে তাকে। এক গাইড দাবি করেন, ২৩ মে সকাল ১০টা নাগাদ তিনি দম্পতিকে তিনজন পুরুষের সঙ্গে মাওলাখিয়ায় তিন হাজার ধাপের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে দেখেছিলেন। গাইড বলেন, ‘২২ মে আমি নিজেই তাদের গাইড হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা বিনয়ের সঙ্গে অন্য একজন গাইড বেছে নেন।’ পুলিশ জানায়, এসব তথ্য একত্র করেই হত্যার মূল পরিকল্পনা, সময় ও সহযোগীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

এ ঘটনায় মেঘালয়ের পর্যটন নিরাপত্তা ও গাইড লাইসেন্সিং পদ্ধতি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। তদন্তকারীরা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ড ‘পুরোপুরি পূর্বপরিকল্পিত’ এবং ‘চমকে দেয়ার মতো নির্মমতা’।