একজনের অসুস্থতায় আটকা পৌনে পাঁচ লাখ মানুষের বেতন

মে মাস শেষের পথে অথচ এখনো এপ্রিল মাসের বেতন পাননি দেশের প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী। শুধু একটি বিভাগের এক কর্মকর্তার অসুস্থতার কারণেই পুরো বেতন কার্যক্রম থমকে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মীরা।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতায় থাকা এসব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রক্রিয়াজাত করে এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল। এই সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান বর্তমানে অসুস্থ। বিকল্প কেউ না থাকায় বেতন বিল তৈরির কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। ইএমআইএস সেলের প্রোগ্রামার মো. জহির উদ্দিন দাবি করেন, ‘কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে দ্রুতই শেষ হবে।’ তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়া শেষ হলেও ব্যাংকে বেতন পৌঁছাতে আরও চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে। ফলে মে মাসের শেষ সপ্তাহের আগে এপ্রিল মাসের বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষকরা এখন তাদের ড্যাশবোর্ডেও প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারছেন না। কেউ কেউ এটিকে বড় ধরনের প্রশাসনিক সংকট ঢাকার কৌশল হিসেবেও দেখছেন। শিক্ষক নেতারা বলছেন, একজন কর্মকর্তার স্বাস্থ্যগত কারণে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বেতন কার্যক্রম থেমে যাওয়া অগ্রহণযোগ্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, ‘পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ভাগ্য একজন কর্মকর্তার অসুস্থতার ওপর নির্ভর করতে পারে না। এটি শিক্ষকদের প্রতি চরম বৈষম্য এবং পরিকল্পিত বঞ্চনার শামিল।’ তিনি আরও বলেন, ঈদুল আজহার আগেই পূর্ণ বেতন ও উৎসবভাতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষক সমাজকে বঞ্চিত করার দায় শিক্ষা প্রশাসনকে নিতে হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে বেতন প্রদান চালু হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক এই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হন। পরবর্তী ধাপে আরও দেড় লাখ যুক্ত হন। তবে এনআইডি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, জন্ম তারিখ বা বানানগত ত্রুটির কারণে অনেক শিক্ষক এখনো এ ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন। ফলে তাদের বেতনও স্থগিত রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়েই বেতন পেলেও এমপিওভুক্তদের ক্ষেত্রে বারবার অবহেলার শিকার হতে হয়। এই বৈষম্যের প্রতিবাদে জাতীয়করণের দাবি আবারও জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি জানতে মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান এবং পরিচালক (মাধ্যমিক) কে এম এ এম সোহেলের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। এমনকি খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তারা সাড়া দেননি।