শিক্ষার্থীদের ধোলাই খেয়ে হাসপাতালে হাসনাত আবদুল্লাহ , পুরোনো ভিডিও প্রচার

শিক্ষার্থীদের ধোলাই খেয়ে হাসপাতালে হাসনাত আবদুল্লাহ , পুরোনো ভিডিও প্রচার

অন্তত আজ (২৭ জানুয়ারি) ভোরবেলা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “শিক্ষার্থীদের ধোলাই খেয়ে সমন্বয়ক হাসনাত এখন হাসপাতালে।” এছাড়া, উক্ত একই ভিডিওটি প্রচার করে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, এবার মধ্য রাতে গণধোলাই খেয়ে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। উক্ত ভিডিওটিতে হাসনাত আবদুল্লাহকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে শুয়ে থাকতে দেখা যায় এবং তার আশেপাশে আরো কয়েকজন ব্যক্তিকেও দেখা যায়।

 ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর গতরাতের বা সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং, গত আগস্ট মাসে ঢাকার সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়ার পর হাসনাত আব্দুল্লাহকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেসময়ে ধারণকৃত দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৬ আগস্টে “গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে হাসনাত আবদুল্লাহ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়৷ Comparison: Rumor Scanner এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে একই শিরোনামে ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৫ আগস্টে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে (ওসেক) নিয়ে আসা হয়েছে। রোববার (২৫ আগস্ট) রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

এর আগে রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে আটক রাখার খবরে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে।

এছাড়াও, গত ২৫ ও ২৬ আগস্টে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪, একাত্তর টিভি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনসহ একাধিক গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে আহত অবস্থায় হাসনাত আবদুল্লাহর ধারণকৃত দৃশ্য প্রচার করা হয়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এদিকে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইটে আজকে (২৭ জানুয়ারি) প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলা অবস্থায়ই সংঘর্ষস্থলে হাজির হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি তোপের মুখে পড়েন।

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নীলক্ষেত এলাকায় আসেন হাসনাত। এ সময় তিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা তার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। এরপর হাসনাত উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলে নিজেই উভয়পক্ষের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাসনাতকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ এবং ‘এসেছে রে এসেছে- ফুটেজখোর এসেছে’ স্লোগান দেন। পরে তিনি সংঘর্ষ এলাকা ছেড়ে ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান।” এছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তরে “সমন্বয়ক হাসনাতের সঙ্গে কী হয়েছিল গতরাতে?” শীর্ষক শিরোনামে আজ (২৭ জানুয়ারি) প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনেও এ বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়। তবে, কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেই হাসনাত আবদুল্লাহ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল (২৬ জানুয়ারি) ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁরা ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হন। এরপর সেখানে কিছু সময় থেকে সরে এসে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন।

এতে সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে অপমান করেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেছেন। তাঁরা জানান, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে হবে এবং সহ–উপাচার্যকে তাঁর আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। সুতরাং, গত আগস্ট মাসে ঢাকার সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়ার পর হাসনাত আব্দুল্লাহকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেসময়ে ধারণকৃত দৃশ্যকে গতকাল (২৬ জানুয়ারি) বা সাম্প্রতিক সময়ে হাসনাত আবদুল্লাহ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।