আওয়ামী লীগ সব দলকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল: জি এম কাদের

আওয়ামী লীগ সব দলকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল: জি এম কাদের

একদলীয় শাসন কায়েম করতে আওয়ামী লীগ সব দলকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। আজ শনিবার দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জি এম কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলেন। যে কারণে, আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দিয়েই ‘‘বি” টিম সৃষ্টি করেছিল। একই উদ্দেশ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলও সৃষ্টি করা হয়েছিল তখন। আমি সেই অভিযোগ সংসদে ও সংসদের বাইরে করেছি। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর সংসদে বলেছি। একদলীয় শাসন কায়েম করতে আওয়ামী লীগ সরকার সব দলকে ধংস করতে চেয়েছে।’ জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি’কে হামলা-মামলা দিয়ে ধংস করতে চেয়েছে।

 তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দিয়েছিল। আবার, জামায়াতে ইসলামীকে মাঠে দাঁড়াতে দেয়নি। হামলা ও মামলা দিয়ে জামায়াতকেও শেষ করতে চেয়েছে। আর, জাতীয় পার্টিকে ধংস করতে চেয়েছে দুই ভাগ করে। ২০১৪ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টির মধ্যে কৃত্রিম বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছিল আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী ও বহিষ্কৃত নেতাদের সাহায্যে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আরও একটি জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ পার্টির উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় পার্টির ব্যানারে এবং লোগো ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনে মূল জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগ সমর্থক দালাল চক্রটির সব কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সরকার সমর্থক সব গণমাধ্যম সহায়তা করত। তাদের কাজ ছিল মূল জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো।’ জি এম কাদের বলেন, ‘ছাত্র-জনতা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। ছাত্ররা জীবন দিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সফল করেছে। এই আন্দোলনে জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।

এই তরুণ ভোটারদের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। আগামী দিনের রাজনীতিতে তরুণরা অসামান্য অবদান রাখেবে। ২০২৪ সালে আমাদের তরুণরা ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছি, তারা রাজনীতি ভালোই বোঝে। তরুণদের চিন্তা ও প্রত্যাশা মাথায় রেখে আগামী দিনে রাজনীতি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা তাদের পাশে ছিলাম। ১ জুলাই ছাত্ররা আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন শুরু করে। আমি ৩ জুলাই সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্যে ছাত্রদের আন্দোলনে সমর্থন ঘোষণা করেছি। আমরা বলেছি, ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান বিরোধী। তখনই আমি বলেছি, দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।’ জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘৬ জুলাই গাজীপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে আমি বলেছি, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। আমাদের শহীদ মিনার হচ্ছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আত্মত্যাগের প্রতিক। ছাত্রদের শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নিতেও বলেছিলাম আমি। যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করা হলো, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। সমন্বয়কদের মুক্তি দাবি করেছি। আমরা বিবৃতি দিয়ে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের আমরা বীর মুক্তিসেনা হিসেবে অভিহিত করেছি। আমাদের জাতীয় ছাত্র সমাজ রাজধানীতে ব্যানার নিয়ে আন্দোলন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘রংপুরে আমাদের সংগঠন শক্তিশালী, আমার নির্দেশে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা রংপুরে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে, রংপুরে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের পদ-পদবি উল্লেখ করে মামলা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীরা ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছিল। রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার আগে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি।

 শহীদ আবু সাঈদের পরিবারকে সান্তনা দিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টির ভুমিকা অত্যান্ত পরিস্কার।’ মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, শেরীফা কাদের, মনিরুল ইসলাম মিলন। উপদেষ্টামন্ডলীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. মো. নূরুল আজহার শামীম, মো. আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, মো. আতাউর রহমান সরকার, পনির উদ্দিন আহমেদ, মো. লিয়াকত আলী খান, খান মো. ইস্রাফিল খোকন, মেহেরুন নেসা খান হেনা, মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, লাকী বেগম, প্রফেসর ড. গোলাম মোস্তফা, মো. আনিসুল ইসলাম মন্ডল, মো. তোফাজ্জল হোসেন, মাহমুদুর রহমান লিপটন, মমতাজ উদদীন, প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ইলিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, মো. মাশরেকুল আজম (রবি), মো. শাহেদ আলী জিন্নাহ, মো. আলা উদ্দিন মিয়া, মফিজুর রহমান মফিজ, মো. ইয়াকুব হোসেন, মোহাম্মদ আবু তাহের, মেজর (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বী চৌধুরী রুম্মন, গোলাম রহমান মাসুম।

 ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মো. নজরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম মধু, শেখ আলমগীর হোসেন, সুলতান আহমেদ সেলিম, পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, এস এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন, মো. আবু সালেক, আহম্মেদ শফি রুবেল, শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, লুৎফুর রেজা খোকন।