দাবি এবার ‘একদফা’

শেষ পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগের ‘একদফায়’ গড়াল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম একদফার ঘোষণাপত্র তুলে ধরেন। দাবি আদায়ে আজ রোববার থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারা। ছাত্র-জনতার সমাবেশে উত্থাপিত ঘোষণাপত্রে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জনগণকে মুক্ত করতে আবার রাস্তায় নেমে এসেছি। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একদফা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। একদফাটি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
অসহযোগে যা থাকছে: সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচিতে জরুরি সেবা ছাড়া সব ক্ষেত্রে সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।রূপরেখায় বলা হয়েছে, ‘কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না। সব ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না। দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাইবোনরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যাতিত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। বিজিবি ও নৌবাহিনী ছাড়া অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না।
বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে। আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।’ হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।