৪ শিক্ষক বছরে স্কুলে আসেন ১০ দিন, ভাড়াটিয়া শিক্ষকে চলে ক্লাস

৪ শিক্ষক বছরে স্কুলে আসেন ১০ দিন, ভাড়াটিয়া শিক্ষকে চলে ক্লাস

বান্দরবান জেলার আলীকদমের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছরে এই চার শিক্ষক বিদ্যালয়ের উপস্থিতি ছিল মাত্র ১০ দিন। ছুটি ছাড়াই মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন এই চার শিক্ষক। এমন দুর্ভোগ চিত্র দেখা মিলেছে কুরুকপাতা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাউলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার লাউলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল ২০১০ সালে এবং জাতীয়করণ হয় ২০১৭ সালে। সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৫০ জন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী তিন শিক্ষক মিলে রয়েছে চারজন। কিন্তু সেই চারজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের উপস্থিত থাকেন বছরে কয়েকদিন। বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে মাসে ২ হাজার বেতনে ভাড়াটিয়া হিসেবে রাখা হয়েছে স্থানীয় এক শিক্ষককে। কিন্তু সরকারি শিক্ষকরা মাসের পর মাস নিয়মিত বেতন তুলে নেয়ার ছাড়া বিদ্যালয় অনুপস্থিত থাকেন বছরের পর বছর।

শুধু এই বিদ্যালয় নয় আরো বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়গুলো একই চিত্র। এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাউলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার শিক্ষক তিন থেকে চারমাসে স্কুলে উপস্থিত থাকেন মাত্র দুই থেকে তিনদিন। এরপর মাসের পর মাস বিদ্যালয়ের আর আসেন না। সরকারি এই শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত ক্লাস করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও পাত্তাই দেননি শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ে আসলেও ক্লাস না করে ঘুরেফিরে আবার চলে যান শহরে দিকে। শিক্ষকদের এই অবহেলা কারণে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মংহ্লাথুই মারমা, সহকারী শিক্ষক সাজেদা খাতুন, উঞোচিং চাক ও তানভীর হাসান সজীবসহ এই চারজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে পাঠদান করান। তারা সবাই আলীকদম উপজেলার বাসিন্দা। কিন্তু তারা বছর ধরে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি মাত্র ১০ দিন। নিয়মিত বিদ্যালয়ে না আসায় ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত ওই চার শিক্ষকদের ওপর। সরেজমিনে দেখা গেছে, আলীকদম সদর কুরুকপাতা দুর্গম ইউনিয়নের ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাউলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকাল থেকে দুর্গম শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের উপস্থিত থাকলেও প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী আরো তিন শিক্ষক বিদ্যালয়ে দেখা মেলে না। স্থানীয় এক যুবককে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালাচ্ছেন এলাকাবাসী। কাংম্পুক পাড়া কারবারি মাংখই ম্রো বলেন, শিক্ষকরা তিন মাসে আবার চার মাসে একবার করে আসে। শিক্ষকদের অবহেলা কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভালো শিক্ষা পাচ্ছে না। লাউলিংন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি চংঅং ম্রো বলেন, সরকারি শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসে না। একদিন আসে আবার চলে যায়। এরপর মাসের পর মাসে না।

এই জন্য গ্রামে স্থানীয় এক ছেলেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান চালাচ্ছি। এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মং হ্লাথুই মার্মা অস্বীকার করে বলেন, আমাদের বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার পর কেউ দেখতে পারে না। তার কারণে সবাই আমাদের শিক্ষকদের পেছনে লেগে আছে। আর সব শিক্ষক প্রতিদিন বিদ্যালয়ের আসে। যারা অভিযোগ করেছে তারা সবাই ভুয়া বলে দাবি করেন তিনি। কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাংপুং ম্রো বলেন, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসে না এটা ১০০% সঠিক। এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে দুর্গম এলাকার শিক্ষার মান বাড়বে। আর এসব বিষয়ে কমিটি সদস্যরা অভিযোগ দেননি বলে আজ বিদ্যালয়ে এই দুর্দশা। আলীকদম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসারফ হোসেন খানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা প্রাথমিক কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হবে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।