মতিউরকে বাঁচাতে কেন তৎপর প্রভাবশালী মহল?

এক মাস আগেও প্রতাপশালীদের বিপদে আশ্রয় দিয়েছেন সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। অনেক রাঘববোয়ালকে বিপদে আশ্রয় দিলেও এখন মহাবিপদে মতিউর। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ব্যাকুল তিনি। ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছেন অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে। এই বিপদে কেউ সহায়তার আশ্বাস দিলেও কেউ আবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কিছুই করার নেই। মতিউর যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তার ফোনলিস্ট এখন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে। এনবিআরের সদ্যবিদায়ী আলোচিত কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের আয়কর নথি থেকে বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
একই সঙ্গে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এনবিআরসহ বিভিন্ন দপ্তরে চলছে চিঠি চালাচালি। মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের যেসব সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করে এ সপ্তাহেই সব স্থাবর সম্পদ জব্দ বা ক্রোক করার কথা রয়েছে। এছাড়া অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে বলেও জানা গেছে।ছাগলকাণ্ডের পর কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যখন বেরিয়ে আসে সাপ, তখন নিজেকে রক্ষায় প্রভাবশালীদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন মতিউর। দুদকের অনুসন্ধান কমিটির পাশাপাশি মতিউরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল সিআইসি। এত এত বিপদ যখন চারদিকে তখন মতিউরকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছে প্রভাবশালী একটি গ্রুপ।
তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে শুরু করেছে দেনদরবারও। চক্রটিতে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ দপ্তরের কর্মকর্তা, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ও মতিউরের সুবিধাভোগী অংশীজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিআইসি মতিউরের আয়কর ফাইলে দেখানো আয়-ব্যয় ও সম্পদের অনুসন্ধান করছে। তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়েও তদন্ত করা হবে। তবে মতিউরের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মতিউরকে একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নয় সিআইসি।এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, মতিউরের আয়কর নথি গত সপ্তাহেই এনবিআরের কাছে চেয়েছে সংস্থাটি। আয়কর নথি অনুযায়ী, মতিউর কমবেশি ২০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক।
যদিও মতিউরের বিরুদ্ধে এর আগে চারবার অনুসন্ধান করে দায়মুক্তি দেয় দুদক। এমন বিপদের দিন আসতে পারে ভেবে মতিউর আগে থেকেই সম্পদ নিজের নামে না করে পরিবারের সদস্যদের নামে করেছেন বলে মনে করেন অনেকেই। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে মতিউর ও তার পরিবারের ৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। একই সঙ্গে তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বিএফআইইউ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এমএফএস কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের চিঠি দেওয়া হয়েছে।